লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত দুই ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতার হামলা ও অবিলম্বে চেয়ারম্যানদ্বয়ের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করা হয়েছে। (আজ)রবিবার বিকেল তিনটায় উপজেলার সাহেবের হাট ইউনিয়ন ও তোরাবগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় ফাজিল ব্যাপারির হাটে এ হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে নিগৃীহিত,ভুক্তভোগী,নিপীড়িত জনগণ আওয়ালীগ লীগ সরকার পতনের পর থেকে চেয়ারম্যানদ্বয়কে নজরদারিতে রেখেছেন।উভয় চেয়ারম্যানসহ কমলনগর উপজেলার মোট ৬ জন চেয়ারম্যান সরকার পতনের পর থেকে পলাতক রয়েছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে।তাদের মধ্যে, চর মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউসুফ আলি, তোরাব গঞ্জ ইউনিয়নপরিষদের চেয়ারম্যান মির্জা আশরাফুল জামান রাসেল, সাহেবের হাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের, ফলকন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ বাগা, পাঠারির হাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন রাজু।
তোরাবগঞ্জ ইউনিয়ন ও সাহেবেরে হাট ইউনিয়নে স্থাানীয় জনসাধারনের এ বিক্ষোভে অংশ নেন ছাত্রদল, যুবদলসহ আওয়ামী বিদ্বেষী বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ। উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক সাজ্জাদ হোসেন সাজু ও সদস্য সচিব মোঃ জাফর আহম্মদ তাদের দলবলসহ সাহেবেরহাট ইউনিয়ন পরিষদের উদোক্তা মাকছুদুর রহমান ও তোরাবগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান মোঃ সিরাজুল ইসলামের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে বলেও খবর পাওয়া যায়। হামলার শিকার সিরাজ(মেম্বার) তোরাবগঞ্জ ইউপি’র ৭ নং ওয়ার্ডের সদস্য এবং ইউনিয়ন বিএনপি’র সহ-সভাপতি ও সাহেবের হাট ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোক্তা মাকছুদ ছাত্রদলের নেতা বলে জানা যায়। গত ৫ আগস্ট আ’লীগ সরকারের পতনের পর তোরাবগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসছেন ওই ইউপি’র প্যানেল চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা মোঃ সিরাজুল ইসলাম। রবিবার দুপুরে দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনগণের পাশাপাশি উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক ও সদস্য সচিব ১০-১২ টি হোন্ডা দিয়ে ২০-৩০ জনের একটি গ্রুপ লাঠিসোঁটা নিয়ে পরিষদের সামনে আসে। পরে পরিষদের ভিতরে গিয়ে সিরাজ মেম্বারের উপর অতর্কিত হামলা করে এবং পরিষদের আসবাবপত্র ভাংচুর করে।এর আগে তারা সাহেবেরহাট ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে চেয়ারম্যানকে না পেয়ে তার উদ্যোক্তাকে পিটিয়ে আহত করে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনার সময় ইউনিয়নের দীর্ঘদিনের নির্যাতিত ভুক্তভোগী জনসাধারণের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ছাত্রদলের আহবায়ক সাজ্জাদ ও সদস্য সচিব জাফরসহ ১০-১২ টি মটর সাইকেলে ২০-৩০ জনের একটি গ্রুপকে হামলা করতে দেখা যায় এসময় ’সবাই চলে আসো, কাজ শেষ’ বলে তারা সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বেরিয়ে আসতে দেখা যায়। পরিষদের অ’নার বোর্ড ভাঙ্গা, মাটিতে পড়ে আছে। এবং আসবাবপত্র উলোটপালোট পড়ে থাকতে দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ৫ আগস্টের পর এই পরিষদের চেয়ারম্যান নাই। দায়িত্ব পালন করে আসছেন প্যানেল চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা সিরাজ মেম্বার। এই পরিষদ এখন প্রায় বিএনপি’র স্থানীয় অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এমনকি ১৫ তারিখে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জন্মদিনের দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন এই অফিসে করা হয়েছে।
হামলার শিকার প্যানেল চেয়ারম্যান সিরাজ জানান, এরা সবাই আমাদের দলীয় লোক। পরিষদে প্রবেশ করে আমাকে তুই, তোকারি বলে আমার উপর হামলা করে।পরে পরিষদের আসবাবপত্র ভাংচুর করে। নৌকা প্রতিকে নির্বাচিত তোরাবগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান ও সাবেক উপজেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক মীর্জা আশরাফুল জামান রাসেল বলেন, আমি ইউএনও’র কাছ থেকে একদিনের ছুটি নিয়ে ঢাকায় এসেছি ছাত্রদলের লোকজন গিয়ে আমার পরিষদে গিয়ে হামলা করে এবং আমার প্যানেল চেয়ারম্যানকে মারধর করে। সাহেবেরহাট ইউপি চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক মো.আবুল খায়ের জানান, ছাত্র দলের লোকজন গত কাল শনিবার পরিষদে গিয়ে পদত্যাগ করতে হুমকি দেয়। (আজ) রোববার দুপুরে আবার ২০-৩০ জনের একটি গ্রুপ পরিষদে গিয়ে আমাকে না পেয়ে আমার উদ্যোক্তা মারধর করে। বিষয়টি আমি ইউএনওকে জানিয়েছি।
বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্দেশ অমান্য করে সহিংসতায় জড়ালেন কমলনগর উপজেলা ছাত্রদল। এ ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। হামলার শিকার প্যানেল চেয়ারম্যান সিরাজ জানান, এরা সবাই আমাদের দলীয় লোক। পরিষদে ডুকে আমাকে তুই, তোকারি বলে আমার উপর হামলা করে।পরে পরিষদের আসবাবপত্র ভাংচুর করে। উপজেলা ছাত্রদলের আহবায়ক সাজু জানান, এই পরিস্থিতিতে ভোটি বিহীন চেয়ারম্যানেরা পরিষদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। খবর পেয়ে আমরা চেয়ারম্যানকে বাদ দিয়ে সচিব দিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করতে বলে আসছি। হামলা- ভাংচুরের ঘটনা সত্যি নয়। জেলা ছাত্রদলের সভাপতি হাসান মাহমুদ ইব্রাহিম জানান, বিষয়টি সম্পর্কে এখনো জানিনা। ঘটনার সত্যতা পেলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।