আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য র্যাব সদস্যরা প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করছেন। বিভিন্ন পদমর্যাদার ৯ হাজার র্যাব সদস্যকে দেওয়া হবে প্রশিক্ষণ। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে ঢাকায় প্রথম পর্বে প্রশিক্ষণ চলবে। এরপর ধারাবাহিকভাবে সারাদেশের র্যাব সদস্যদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে নিয়ে আসা হবে।
বৃহস্পতিবার দিনব্যাপী র্যাবের অধিনায়ক সম্মেলন থেকেও নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে র্যাব মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বলেন, নির্বাচনকালীন দায়িত্ব পালনের জন্য র্যাব সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ৮ থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত ঢাকায় প্রশিক্ষণ চলবে। এরপর প্রশিক্ষকরা দেশের বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের অন্যদের প্রশিক্ষণ দেবেন।
সূত্র জানায়, অধিনায়ক সম্মেলনে র্যাবের ১৫টি ব্যাটালিয়নের অধিনায়করা উপস্থিত ছিলেন। সারাদেশের সবকটি ব্যাটালিয়ন অনলাইনে যুক্ত হয়। সকাল ১০টার দিকে বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে বক্তব্য দেন মহাপরিচালক। তিনি মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের সামনের দিনগুলোতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ ও দায়িত্বের কথা তুলে ধরেন। মহাপরিচালক বলেন, আসন্ন নির্বাচনে নিষ্ঠা, সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে।
অন্য একটি সূত্র জানায়, র্যাবের কোনো সদস্য অনিয়ম ও অপেশাদার কর্মকাণ্ডে জড়ালে কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়। পেশাদারিত্বের সঙ্গে সবাইকে দায়িত্ব পালনের বিষয়টি স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়েছে। জাতীয় কোনো ইস্যু ও নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট ব্যাপারে আগাম গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আসন্ন দুর্গাপূজায় যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ছাত্র সংসদ নির্বাচনে কীভাবে কাজ করতে হবে সেই পরামর্শের বিষয়ও উঠে আসে। র্যাব বিলুপ্তির চিন্তা বাদ দিয়ে বাহিনীর সদস্যদের জনমুখী কাজে মনোনিবেশ করার পরামর্শ দেওয়া হয়।
র্যাবের মুখপাত্র উইং কমান্ডার এম জেড এম ইন্তেখাব চৌধুরী বলেন, অধিনায়ক সম্মেলেনে সব ব্যাটালিয়নের আভিযানিক বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে। আগামী নির্বাচনে দায়িত্ব পালনের জন্য র্যাাব সদস্যরা কীভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন সেটি উঠে আসে।
এছাড়া সম্মেলনে বিভিন্ন ব্যাটালিয়নের সমস্যার কথা কেউ কেউ তুলে ধরেন। এর মধ্যে ছিল কক্সবাজারে র্যাব-১৫’র ব্যাটালিয়নের নিজেদের জায়গায় কার্যালয় না থাকা। এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেওয়া হয় বাহিনীর নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে।
এদিকে নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরাপদ করতে দেড় লাখের বেশি পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরই মধ্যে পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও আইনজীবীদের পরামর্শ নিয়ে ৯টি প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরি করেছে পুলিশ সদরদপ্তর।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোর্সের মাধ্যমে নির্বাচনের সময় যে কোনো ধরনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করতে পুলিশ সদস্যদের প্রস্তুত করা হবে। পুলিশের দেশজুড়ে ১৩০টি ছোট ও চারটি বড় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে।
এসব কেন্দ্রেই নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। নির্বাচনী প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে দুটি প্রামাণ্যচিত্র, একটি ১৫ মিনিটের অডিও-ভিজ্যুয়াল কনটেন্ট এবং একটি ৯ মিনিটের ফিল্মের পাশাপাশি একটি বুকলেট তৈরি করা হয়েছে।
৩১ আগস্ট থেকে ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঢাকার পুলিশ সদরদপ্তরের মডিউল অনুযায়ী ১৫০ জন মাস্টার ট্রেইনারকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। দেশের ১৯টি পুলিশ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে ১ হাজার ২৯২ জন মাস্টার ট্রেইনার বা ট্রেইনার অব ট্রেইনার্স (টিওটি) তৈরির পরিকল্পনাও রয়েছে।
তারাই পরবর্তী সময়ে নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের জন্য দেড় লাখের বেশি পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেবেন। নির্বাচনের সময় সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য বাস্তবমুখী মহড়া প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে সব ট্রেইনারকে। নির্বাচনকালীন সর্বাত্মক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই কার্যক্রমগুলো পরিচালিত হচ্ছে।
এরই মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুলিশকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কোর কমিটির একাধিক সভায় নির্বাচনের সময় দায়িত্ব পালনের বিষয় উঠে আসে। এছাড়া ডিসি ও এসপিদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভা হয়েছে। সেই সভা থেকে সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের সমন্বয়ে মহড়ার কথা বলা হয়েছে।
আগামী নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে পুলিশকে সব প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গত মার্চে প্রধান উপদেষ্টা মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক সভায় অংশ নেন। তখন প্রধান উপদেষ্টা পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পুলিশের প্রস্তুতি ও করণীয় সম্পর্কে এখন থেকে উদ্যোগ নিতে হবে।’