ইরানে চলতি বছরের প্রথম নয় মাসে অন্তত এক হাজার মানুষের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। নরওয়ে-ভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ইরান হিউম্যান রাইটস (আইএইচআর) মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) এই তথ্য জানায়।
সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, কেবল গত সপ্তাহেই অন্তত ৬৪ জনকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে—অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৯ জনেরও বেশি মানুষকে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।
আইএইচআরের পরিচালক মাহমুদ আমিরি-মোগাদ্দাম এক বিবৃতিতে বলেন, গত কয়েক মাসে ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের কারাগারগুলোতে এক ধরনের গণহত্যা অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মহলের কার্যকর প্রতিক্রিয়া না থাকায় এই অভিযানের মাত্রা প্রতিদিনই বাড়ছে।
সংস্থাটি বলেছে, এটি কেবল ‘ন্যূনতম হিসাব’; প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কারণ ইরানে সংবাদ প্রচারে কড়া বিধিনিষেধ ও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে।
আইএইচআরের রেকর্ড অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ইরানে সর্বোচ্চ ৯৭৫ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল। ২০২৫ সালে মাত্র নয় মাসেই এই সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়েছে, যা রেকর্ড ভেঙে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকের পর এত ব্যাপক মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের ঘটনা গত তিন দশকে নজিরবিহীন।
ইরানে হত্যা, মাদকপাচার, ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনসহ বড় অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। বর্তমানে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয় কেবল ফাঁসির মাধ্যমে—অধিকাংশ ক্ষেত্রে কারাগারের ভেতরে, তবে মাঝে মাঝে প্রকাশ্যেও ফাঁসি দেওয়া হয়।
আগামী সপ্তাহে নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের সঙ্গে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশের নেতাদের বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। সেখানে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি আলোচনার মূল বিষয় হলেও মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের এই সংকটকে আন্তর্জাতিক আলোচনার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, চীনের পর বিশ্বে প্রতি বছর সর্বাধিক মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে ইরান। তবে দেশটিতে নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না।