উখিয়া বালুখালীতে তিনটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে দুই হাজার রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ঘর সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। সাড়ে তিন ঘন্টার মধ্যেই এসব ঘর পুড়ে একদম ছাই হয়ে গেছে। ৯, ১০ ও ১১ নং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এই ঘটনা ঘটেছে।
এমন ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সূত্রপাত হয়েছে ক্যাম্প ১১, ডি-১৫ এর মোহাম্মদ হোসেনের বাড়ি থেকে। মোহাম্মদ হোসেন ওই ব্লকের বাসিন্দা আব্দুল আজিজের ছেলে।
মোহাম্মদ হোসেন আগুনের সূত্রপাতের ব্যাপারে কক্সবাজার বার্তাকে বলেন, আমি বাজার থেকে এসে বিশ্রাম নিতে বসলে হঠাৎ বাহির থেকে চিৎকার চেঁচামেচি শুনি। চিৎকার শোনার সাথে সাথে আমি বের হলে দেখি আমার বাড়ির পূর্ব কোণায় থাকা সৌর বিদ্যুতের গোড়া থেকে আগুন ছড়াচ্ছে। মুহুর্তেই আমার বাড়িতে আগুন লাগে। খুব চেষ্টার পরও আগুন নিয়ন্ত্রনে আনা আমার এবং আমার পরিবারের পক্ষে সম্ভব হয়নি। বাতাসের কারণে আগুনের লেলিহান শিখা দ্রুত এপাশ ওপাশ ছড়াচ্ছে। প্রাণ নিয়ে দৌড়ে কোনরকম পালিয়েছি।
তিনি আরো জানান, আমার পরিবারের কারো ক্ষতি না হলেও ঘরের আসবাবপত্র ও স্বর্ণসহ টাকাপয়সা আগুনে পুড়ে গেছে। প্রথমে ১১ নম্বর ক্যাম্পের বি ও ই ব্লকে এই আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে পার্শ্ববর্তী ১০ ও ৯ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে রোববার দুপুরের অগ্নিকান্ডে আশ্রয় শিবিরের গৃহহারা হয়েছে ১২ হাজার রোহিঙ্গা। পরদিন সোমবার সকালে ক্যাম্পে গেলে দেখা যায় ভস্মীভূত ঘর গুলোতে আসতে শুরু করে ক্ষতিগ্রস্থ রোহিঙ্গারা। যেখানে অপলক দৃষ্টিতে তাদের অসহায়ত্ব প্রকাশ পায়।
এইদিন সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) আশ্রয়হীন রোহিঙ্গাদের অস্থায়ী ঘর তৈরি করতে সহযোগিতা করা শুরু করেছে। বাঁশ-তাঁবু দিয়ে রোহিঙ্গাদের বসতি করা হচ্ছে। জাতিসংঘের সংস্থা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) রোহিঙ্গাদের জরুরি খাদ্য সহায়তা দিচ্ছে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাস্থলে পাঁচটি মেডিকেল টিম রোহিঙ্গাদের চিকিৎসাসেবা দিচ্ছে, যেখানে ৯০ জন কমিউনিটি হেলথ কর্মী কাজ করছেন বলে এনজিওর একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ক্ষয়ক্ষতির ব্যাপারে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এ অগ্নিকাণ্ডে আনুমানিক ২ হাজার ঘর পুড়ে গেছে। ৩৫টি মসজিদ ও মাদ্রাসা পুড়ে গেছে। এ ছাড়া হাসপাতাল ও হেলথ সেন্টারসহ ১৫টি প্রতিষ্ঠান পুড়েছে।
অন্যদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুনের ঘটনায় কথিত সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে দায়ী করছেন সাধারণ রোহিঙ্গারা। কথিত সন্ত্রাসীরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। শুধু এক স্থানে না, একযোগে অন্তত পাঁচটি জায়গায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে বলে জানিয়েছে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন রোহিঙ্গা।।
আবার অগ্নিকান্ডের পরদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হতে দেখা যায়। ভিডিও চিত্রে দেখা যায়, ক্যাম্পে দাউ দাউ আগুন জ্বলছে। আর বসতিতে নিজ হাতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি বেশ রোহিঙ্গারা চিৎকার করতেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে এই ভিডিও নিয়ে। এরপর অগ্নিকাণ্ডটি দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধূম্রজাল। তবে স্থানীয় একটি পক্ষের দাবি, পরিকল্পিতভাবে রোহিঙ্গারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। নিজ ঘরে নিজেরাই আগুন দিয়েছে।
শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নাশকতা নাকি দুর্ঘটনা তা তদন্ত করা হচ্ছে। এ ঘটনায় এক রোহিঙ্গা শরণার্থী যুবককে আটক করা হয়েছে। পুলিশ এরই মধ্যে তদন্তে নেমেছে। তদন্তের জন্য ৭ সদস্যদের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ানকে প্রধান করে এই কমিটি করা হয়।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) ডিআইজি (এফডিএমএন) মো. জামিল হোসেন বলেন, রবিবার আগুন ধরিয়ে দেওয়ার সন্দেহে একজনকে আটক করা হয়েছে। তার বয়স ১৩-১৪ বছর। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্ত কমিটির মুখোমুখি করা হবে।