ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ড. মুনতাসীর মামুন বলেছেন, আমেরিকা, চীন ও সৌদি আরবের মতো বড় দেশগুলো একাত্তরের গণহত্যা চালাতে সহায়তা করেছে।
তিনি বলেছেন, ‘গণহত্যাটা আসলে কেমন ছিল। অনেকে বলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের গণহত্যা সবচেয়ে বড়। কিন্তু সময়ের পরিসর যদি বিচার করেন, তাহলে আমি ইতিহাসের ছাত্র হিসেবে বলতে পারি এটা সবচেয়ে বড়। এটা সবচেয়ে বেশি রাজনীতির শিকার হয়েছে। বাংলাদেশের গণহত্যাকে সবাই সমর্থন করেছে। আমেরিকা, চীন, সৌদি আরব সবাই আমাদের গণহত্যায় প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করেছে।’
শনিবার (২৫ মার্চ) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে জাতীয় গণহত্যা দিবসের আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। সেখানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মামুন এসব কথা বলেন।
সভায় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু। বিশেষ অতিথি ছিলেন জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক রকিবুল হাসান। সঞ্চালনা করেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।
সভায় আমির হোসেন আমু বলেন, ‘১৯৬১ সাল থেকে আমরা বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনায় একটি স্বাধীন বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলাম। বঙ্গবন্ধু তার ত্যাগ-তিতিক্ষা দিয়ে সারা বাংলার সাড়ে সাত কোটি মানুষকে একত্রিত করেছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘গণহত্যা কেন হয়েছিল তা যদি আমরা খুঁজি, তাহলে দেখব পাকিস্তানের নাকের ডগায় বসে কীভাবে বঙ্গবন্ধুর শাসন বাংলায় চলেছিল। তার কথায় মানুষ বাংলা থেকে পাকিস্তানের পতাকা বিদায় করে দিয়েছিল। বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে পঁচাত্তরের পর ইতিহাস জানতে দেওয়া হয়নি। কয়েকটি প্রজন্মকে রাজনৈতিকভাবে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। সমস্ত নির্যাতিত নারীদের পিতা হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধু তাদের আশ্রয় দিয়েছিলেন। তাদের পুনর্বাসন থেকে শুরু করে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের মানুষকে গড়ে তোলার কাজ করে গেছেন তিনি।’
আমু বলেন, ‘কেন বারবার শেখ হাসিনার ওপর হামলা? কারণ তাকে হত্যা করতে পারলে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বদলে দেওয়া যাবে। তাকে হত্যা করতে পারলে যুদ্ধাপরাধীরা মুক্তিযোদ্ধা হবে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজ তলাবিহীন ঝুড়ি থেকে উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আর একমাত্র শেখ হাসিনার হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ। তা না হলে হয়ত বাংলাদেশে আবারও ওই পাকিস্তানি শক্তির দোসররা এদেশের মানুষের ওপর গণহত্যা চালাবে। তাই আগামীতে সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।’
সভায় শেখ ফজলে শামস পরশ বলেন, ‘ওই রাতে এক লাখ ঘুমন্ত নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনী। ওই হত্যাকাণ্ডকে সহযোগিতা করেছিল তাদের দোসর আলবদর, আল শামস। বাঙালি জাতিকে বিলুপ্ত করার জন্য এ গণহত্যা করেছিল। আমাদের মাতৃভাষা থেকে মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত পাকিস্তান আর্মি আমাদের বারবার নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছে। ১৯৭১ সালে জামায়াত কীভাবে পাকিস্তানিদের সহায়তা করেছিল তা আমরা জানি। অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়, স্বাধীনতার প্রায় ৫০ বছর পরে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পেয়েছি। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন, সেখানে বেগম খালেদা জিয়া সেইসব যুদ্ধাপরাধীদের পুরস্কৃত করেছিল। তাদের রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছিল।’
সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার প্রতিবেদন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে যখন আমাদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়েছিল, তখন কি আমাদের মানবাধিকার ছিল না? বিএনপির আমলে ২০০১ সালে শুধু নৌকায় ভোট দেওয়ার অপরাধে ধর্ষিত হয়েছিল পূর্ণিমা। তার কি মানবাধিকার ছিল না? তাহলে এই সুশীল ব্যক্তিরা কোথায় ছিলেন?’
রকিবুল হাসান বলেন, ‘আমরা ১৯৭১ সালে ব্যাট হাতে যুদ্ধ করেছিলাম আর শেষ করেছি অস্ত্র হাতে। ২৫ ও ২৬ মার্চ কারফিউ ছিল। ২৭ তারিখ আমি রাস্তায় বের হয়ে যে চিত্র দেখেছিলাম তা সত্যিই বর্ণনা করার মতো না। গণহত্যার ইতিহাস জানতে হবে আমাদের। এদেশটা খুব সহজে স্বাধীনতা পায়নি। আমাদের যুদ্ধ এখনও শেষ হয়ে যায়নি। আগামীতে আপনাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দেশে যারা যুদ্ধাপরাধীদের প্রতিষ্ঠিত করেছে তারা দেশ পরিচালনা করবে নাকি মুক্তিযুদ্ধের শক্তি।’
তিনি বলেন, ‘তরুণদের বঙ্গবন্ধুকে জানতে হবে। তা না হলে আমরা সুখী সমৃদ্ধির বাংলাদেশ গড়তে পারব না। দেশপ্রেমে আত্মনিয়োগ ও আত্মসমালোচনা করতে হবে।’
মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, ‘২৫ মার্চ ছিল সারা বিশ্বের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। সেই রাতে ঘুমন্ত নিরস্ত্র মানুষের ওপর নির্মম গণহত্যা চালিয়েছিল পাকিস্তানি বাহিনী। আমি আমেরিকার কাছে প্রশ্ন রাখতে চাই, তখন যে পাকিস্তানি বাহিনী আমার কোল খালি করল, পাকিস্তানকে কি আপনারা স্যাংশন দিয়েছেন? কোথায় ছিল মানবাধিকার? এখন তারা বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে কথা বলছেন। কারণ তারা চায় বাংলাদেশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হোক।’
তিনি বলেন, ‘এটা পরিষ্কার যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। আমরা যুবলীগ শেখ হাসিনার সৈনিক। আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সব ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে।’
আলোচনা সভায় যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।