দেশসেরা হাসপাতালে নানা অনিয়ম

,
দেশসেরা হাসপাতালে নানা অনিয়ম

অতিত কজের মূল্যায়ন থেকে দেশসেরার খ্যাতি অর্জন করেছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। স্বীকৃতি স্বরুপ মিলছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার- ২০১৯। কিন্তু বর্তমান সময়ে অতিত সুনামের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসাসেবা ও প্রশাসনিক কর্মকান্ডে রয়েছে নানা অভিযোগ। অনেক চিকিৎসক কর্মচারী হাসপাতালের কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা মানছেন না। প্রভাবের কারণে অনেকেই ইচ্ছামতো দায়িত্ব পালন করেন।

জানা গেছে, ২০১৭ সাল এবং ২০১৮ সাল ও ২০২২ সালেও দেশসেরা হাসপাতালের পুরস্কার অর্জন করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। তখন নানা সুনাম ও দুর্নামের মধ্য দিয়েই দেশসেরার ‘হেল্থ মিনিস্টার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ’ পায় হাসপাতাল।

সূত্র জানায়, কর্তৃপক্ষের কড়াকড়ি আরোপোর কারণে ২০১৮ সালের পর থেকে বদলে যায় হাসপাতালের চিকিৎসা পরিবেশ। রোগীর চিকিৎসাসেবায় নিশ্চিত করা হয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি ও রাউন্ড ব্যবস্থা। বাধ্য করা হয় রোস্ট্রার তালিকা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে। রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সংযোজন হয় নানা রকমের ডিজিটাল যন্ত্রপাতি। সেন্ট্রাল ক্যাশ কাউন্টার চালু হয়। হাসপাতালে প্রথমবারের মতো স্থাপন করা হয় হয়েছে ডায়াবেটিস নির্ণয়ের এইচ ডি এ ওয়ান সি মেশিন। সুরক্ষিত বেস্টনী দিয়ে ২২ টি ফুলের বাগান সুসজ্জিত করা, বিভিন্ন স্থানে এলইডি লাইট বসানো, হাসপাতাল অভ্যন্তরে অবৈধ বসবাসকারীরদের উচ্ছেদ, আই এমসি আই সেন্টাল চালু, করোনারি কেয়ার ইউনিটের সামনে ও স্টাফ কোয়ার্টারের সামনে আধুনিক গেট নির্মাণ, হাসপাতালের প্রবেশ গেটে নিয়ন সাইনের একটি নতুন সাইনবোর্ড বসানো, হাসপাতালের নিজস্ব ওয়েবসাইট চালু, উন্নতমানের অ্যাস্বুলেন্সের ব্যবস্থা, দালালমুক্ত হাসপাতাল ভ্রাম্যমান আদালতে নিয়মিত অভিযানের ব্যবস্থা, রোগী ও স্বজনদের সচেতন করতে বর্হিবিভাগের গুরুত্বপুর্ণ স্থানগুলোতে সাউন্ড বক্সের মাধ্যমে দালাল বিরোধী প্রচারণার ব্যবস্থা, তথ্য কেন্দ্র ও রিপোর্ট ডেলিভারী কাউন্টার, ব্লাড ব্যাংকের সচ্চতা ফিরিয়ে আনা, হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষ নতুন করে ডেকোরেশন, শিশুদের জন্য যুক্ত করা হয়েছে পেডিয়াট্রিক কক্ষ, সেবিকাদের নির্দিষ্ট কক্ষ তৈরি, ভিডিও কনফারেন্স ব্যবস্থা, গাইনী ও পেইং বেডের সেবিকাদের স্টোর ও বসার ব্যবস্থা, বিভিন্ন স্বাস্থ্য বার্তা দিয়ে দেয়াল ও সিড়ি লিখন, ডিজিটাল হাজিরা চালু করা হয়। ফলে ২০১৯ সালের দেশসেরার পুরস্কারও অর্জন করেছে সরকারি এই হাসপাতালটি। দেশসেরা ৭ টি জেলা হাসপাতালের মধ্যে ৬ষ্ট স্থানে রয়েছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল।

সূত্রটি আরো জানায়, তবে বর্তমানে অতিতের সেই ধারাবাহিকতা নেই বললে চলে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশসেরা এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় রয়েছে নানা অভিযোগ। বিগত দিনে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন অনেক রোগী। আবার চিকিৎসকের ভুলে পঙ্গু হয়েছে এক শিশু। আবার কিছু কিছু ঘটনায় নামমাত্র তদন্ত কমিটি গঠন হলেও নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা।

জানা গেছে, চৌগাছা উপজেলার স্বরূপদাহ গ্রামের আনারুল হকের ছেলে আলমগীর কবির কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। কিন্তু বিনা চিকিৎসায় তার মৃত্যুর অভিযোগ করেন স্বজনেরা। অবস্থার অবনতিতে দায়িত্বরত চিকিৎসককে ডেকেও পাওয়া যায়নি।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার কাষ্টভাঙ্গার ইয়ার আলীর ছেলে মাহফুজকে (৮) ভ্যান থেকে পড়ে গিয়ে ডান পায়ে আঘাত পেয়েছিলো। শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা রোগী দেখে তাকে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন বলে স্বজনদের জানান। পরে অস্ত্রোপচার টেবিলে মারা যায় শিশু মাহফুজ। এছাড়া শিশু মাহিবুল নামে এক শিশুর এপেন্ডিসাইটিস ল্যাপরোস্কপি করার সময় পা পুড়ে মাংশ হাড়ের সাথে লেগে যাওয়ার মতো ঘটনার রেকর্ড আছে এই হাসপাতালে। শেষ পর্যন্ত পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে শিশুটির। হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. রাশেদ আলী মোড়ল রোগীদের ধাক্কা দিয়েও বেশ সমালোচিত হন।

সূত্রের দাবি, বর্তমানে সরকারি এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় রয়েছে নানা অনিয়ম। বিশেষজ্ঞরা শুধু খাতা কলমে রয়েছে। বাস্তবে তারা ব্যক্তিগত বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। আর হাসপাতাল চলছে ইনটার্ন ও অনারারী দিয়ে। সাধারণ রোগীদের সাথে এরা খুব রুঢ় আচরণ করেন। বিগত দিনে বন্ধ করা নিয়ম আবার শুরু হয়েছে। ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করা হয়েছিলো কোন ইন্টার্ন রোগীর মৃত্যু ঘোষনা দিতে পারবেন না। এছাড়া রোগীকে রেফার্ড ও ছাড়পত্র তারা দেবেন না। কিন্তু বর্তমানে সব কিছু চলছে।

হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, বিগত দিনের চিকিৎসাসেবার মূল্যায়ন হিসেবে দেশসেরা খ্যাতি অর্জন করেছে হাসপাতাল। জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা রাখার কারণে ২০২২ সালের ২ নভেম্বর পাওয়া দেশসেরা দুটি ‘ন্যাশনাল অ্যাওয়াড’ এর দাবিদার হলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার- ২০১৯ অ্যাওয়ার্ডের দাবিদার সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু। ২০১৮ সালেও ডা. লিটু দেশসেরা হাসপাতালের পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন। আর ২০১৭ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন আরেক সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. একেএম কামরুল ইসলাম বেনু। ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর প্যানপ্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছ থেকে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেছিলেন।

সূত্র জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের অতিত সুনাম ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন। কর্মকর্তাদের কথার মূল্য দেন না অনেক চিকিৎসক। রোগীদের চিকিৎসায় সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করাতো দুরের কথা তারা ইচ্ছামতো হাসপাতালে আসেন আর যান। তাদের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় নানা অনিয়ম সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিদিন সকালে ওয়ার্ড রাউন্ডের পর কোন রোগী ভর্তি হলে পরের দিন সকালে ছাড়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা ভাগ্যে জোটেনা। রাতে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ডে আসেননা।
বহিঃবিভাগে রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে নানাভাবে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন । হাসপাতালের অধ্যাপক ,সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী ও হাসপাতালের অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বহিঃবিভাগে ঠিক মতো রোগী দেখেন না। অনেকেই দায়িত্ব পালনকালে হুট করে বেরিয়ে যান।

গত সপ্তাহে যমেকের অর্থোপেডিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জি এম মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের বহিঃবিভাগে দায়িত্ব পালনকালে সাড়ে ১২টার দিকে কক্ষ থেকে বের হয়ে যান। রোগী ও স্বজনেরা কক্ষের সামনে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অতিষ্ট হয়ে যান। দুপুর ২ টা পর্যন্ত চিকিৎসককে না পেয়ে এক রোগী তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে গিয়ে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নালিশ করেন। এছাড়া রোগীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি এই হাসপাতালে এসে অনারারী ও মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্টের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ফিরছেন।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আব্দুস সামাদ জানান, হাসপাতালের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় সুনাম ফেরাতে নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। সব কিছুই নিয়মের মধ্যে থাকবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রনালয়ে লিখিতভাবে জানাবেন।

দেশসেরা হাসপাতালে নানা অনিয়ম

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

দেশসেরা হাসপাতালে নানা অনিয়ম

দেশসেরা হাসপাতালে নানা অনিয়ম

অতিত কজের মূল্যায়ন থেকে দেশসেরার খ্যাতি অর্জন করেছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। স্বীকৃতি স্বরুপ মিলছে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার- ২০১৯। কিন্তু বর্তমান সময়ে অতিত সুনামের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে কর্তৃপক্ষ। চিকিৎসাসেবা ও প্রশাসনিক কর্মকান্ডে রয়েছে নানা অভিযোগ। অনেক চিকিৎসক কর্মচারী হাসপাতালের কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনা মানছেন না। প্রভাবের কারণে অনেকেই ইচ্ছামতো দায়িত্ব পালন করেন।

জানা গেছে, ২০১৭ সাল এবং ২০১৮ সাল ও ২০২২ সালেও দেশসেরা হাসপাতালের পুরস্কার অর্জন করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল। তখন নানা সুনাম ও দুর্নামের মধ্য দিয়েই দেশসেরার ‘হেল্থ মিনিস্টার ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ’ পায় হাসপাতাল।

সূত্র জানায়, কর্তৃপক্ষের কড়াকড়ি আরোপোর কারণে ২০১৮ সালের পর থেকে বদলে যায় হাসপাতালের চিকিৎসা পরিবেশ। রোগীর চিকিৎসাসেবায় নিশ্চিত করা হয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি ও রাউন্ড ব্যবস্থা। বাধ্য করা হয় রোস্ট্রার তালিকা অনুযায়ী দায়িত্ব পালনে। রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সংযোজন হয় নানা রকমের ডিজিটাল যন্ত্রপাতি। সেন্ট্রাল ক্যাশ কাউন্টার চালু হয়। হাসপাতালে প্রথমবারের মতো স্থাপন করা হয় হয়েছে ডায়াবেটিস নির্ণয়ের এইচ ডি এ ওয়ান সি মেশিন। সুরক্ষিত বেস্টনী দিয়ে ২২ টি ফুলের বাগান সুসজ্জিত করা, বিভিন্ন স্থানে এলইডি লাইট বসানো, হাসপাতাল অভ্যন্তরে অবৈধ বসবাসকারীরদের উচ্ছেদ, আই এমসি আই সেন্টাল চালু, করোনারি কেয়ার ইউনিটের সামনে ও স্টাফ কোয়ার্টারের সামনে আধুনিক গেট নির্মাণ, হাসপাতালের প্রবেশ গেটে নিয়ন সাইনের একটি নতুন সাইনবোর্ড বসানো, হাসপাতালের নিজস্ব ওয়েবসাইট চালু, উন্নতমানের অ্যাস্বুলেন্সের ব্যবস্থা, দালালমুক্ত হাসপাতাল ভ্রাম্যমান আদালতে নিয়মিত অভিযানের ব্যবস্থা, রোগী ও স্বজনদের সচেতন করতে বর্হিবিভাগের গুরুত্বপুর্ণ স্থানগুলোতে সাউন্ড বক্সের মাধ্যমে দালাল বিরোধী প্রচারণার ব্যবস্থা, তথ্য কেন্দ্র ও রিপোর্ট ডেলিভারী কাউন্টার, ব্লাড ব্যাংকের সচ্চতা ফিরিয়ে আনা, হাসপাতালের বিভিন্ন কক্ষ নতুন করে ডেকোরেশন, শিশুদের জন্য যুক্ত করা হয়েছে পেডিয়াট্রিক কক্ষ, সেবিকাদের নির্দিষ্ট কক্ষ তৈরি, ভিডিও কনফারেন্স ব্যবস্থা, গাইনী ও পেইং বেডের সেবিকাদের স্টোর ও বসার ব্যবস্থা, বিভিন্ন স্বাস্থ্য বার্তা দিয়ে দেয়াল ও সিড়ি লিখন, ডিজিটাল হাজিরা চালু করা হয়। ফলে ২০১৯ সালের দেশসেরার পুরস্কারও অর্জন করেছে সরকারি এই হাসপাতালটি। দেশসেরা ৭ টি জেলা হাসপাতালের মধ্যে ৬ষ্ট স্থানে রয়েছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল।

সূত্রটি আরো জানায়, তবে বর্তমানে অতিতের সেই ধারাবাহিকতা নেই বললে চলে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশসেরা এই হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় রয়েছে নানা অভিযোগ। বিগত দিনে বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন অনেক রোগী। আবার চিকিৎসকের ভুলে পঙ্গু হয়েছে এক শিশু। আবার কিছু কিছু ঘটনায় নামমাত্র তদন্ত কমিটি গঠন হলেও নেয়া হয়নি কোন ব্যবস্থা।

জানা গেছে, চৌগাছা উপজেলার স্বরূপদাহ গ্রামের আনারুল হকের ছেলে আলমগীর কবির কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। কিন্তু বিনা চিকিৎসায় তার মৃত্যুর অভিযোগ করেন স্বজনেরা। অবস্থার অবনতিতে দায়িত্বরত চিকিৎসককে ডেকেও পাওয়া যায়নি।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার কাষ্টভাঙ্গার ইয়ার আলীর ছেলে মাহফুজকে (৮) ভ্যান থেকে পড়ে গিয়ে ডান পায়ে আঘাত পেয়েছিলো। শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকরা রোগী দেখে তাকে অস্ত্রোপচার প্রয়োজন বলে স্বজনদের জানান। পরে অস্ত্রোপচার টেবিলে মারা যায় শিশু মাহফুজ। এছাড়া শিশু মাহিবুল নামে এক শিশুর এপেন্ডিসাইটিস ল্যাপরোস্কপি করার সময় পা পুড়ে মাংশ হাড়ের সাথে লেগে যাওয়ার মতো ঘটনার রেকর্ড আছে এই হাসপাতালে। শেষ পর্যন্ত পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে শিশুটির। হাসপাতালের নাক কান গলা বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. রাশেদ আলী মোড়ল রোগীদের ধাক্কা দিয়েও বেশ সমালোচিত হন।

সূত্রের দাবি, বর্তমানে সরকারি এই হাসপাতালে চিকিৎসাসেবায় রয়েছে নানা অনিয়ম। বিশেষজ্ঞরা শুধু খাতা কলমে রয়েছে। বাস্তবে তারা ব্যক্তিগত বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। আর হাসপাতাল চলছে ইনটার্ন ও অনারারী দিয়ে। সাধারণ রোগীদের সাথে এরা খুব রুঢ় আচরণ করেন। বিগত দিনে বন্ধ করা নিয়ম আবার শুরু হয়েছে। ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করা হয়েছিলো কোন ইন্টার্ন রোগীর মৃত্যু ঘোষনা দিতে পারবেন না। এছাড়া রোগীকে রেফার্ড ও ছাড়পত্র তারা দেবেন না। কিন্তু বর্তমানে সব কিছু চলছে।

হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, বিগত দিনের চিকিৎসাসেবার মূল্যায়ন হিসেবে দেশসেরা খ্যাতি অর্জন করেছে হাসপাতাল। জরায়ু-মুখ ও স্তন ক্যান্সার চিকিৎসায় বিশেষ ভূমিকা রাখার কারণে ২০২২ সালের ২ নভেম্বর পাওয়া দেশসেরা দুটি ‘ন্যাশনাল অ্যাওয়াড’ এর দাবিদার হলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার- ২০১৯ অ্যাওয়ার্ডের দাবিদার সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু। ২০১৮ সালেও ডা. লিটু দেশসেরা হাসপাতালের পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন। আর ২০১৭ সালে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ করেছিলেন আরেক সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. একেএম কামরুল ইসলাম বেনু। ২০২০ সালের ৮ অক্টোবর প্যানপ্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁওয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরস্কার তুলে দেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছ থেকে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক ডা. দিলীপ কুমার রায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেছিলেন।

সূত্র জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হাসপাতালের অতিত সুনাম ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছেন। কর্মকর্তাদের কথার মূল্য দেন না অনেক চিকিৎসক। রোগীদের চিকিৎসায় সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করাতো দুরের কথা তারা ইচ্ছামতো হাসপাতালে আসেন আর যান। তাদের কারণে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় নানা অনিয়ম সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিদিন সকালে ওয়ার্ড রাউন্ডের পর কোন রোগী ভর্তি হলে পরের দিন সকালে ছাড়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা ভাগ্যে জোটেনা। রাতে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ওয়ার্ডে রাউন্ডে আসেননা।
বহিঃবিভাগে রোগীরা চিকিৎসা নিতে এসে নানাভাবে হয়রানীর শিকার হচ্ছেন । হাসপাতালের অধ্যাপক ,সহযোগী অধ্যাপক ও সহকারী ও হাসপাতালের অধিকাংশ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বহিঃবিভাগে ঠিক মতো রোগী দেখেন না। অনেকেই দায়িত্ব পালনকালে হুট করে বেরিয়ে যান।

গত সপ্তাহে যমেকের অর্থোপেডিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জি এম মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের বহিঃবিভাগে দায়িত্ব পালনকালে সাড়ে ১২টার দিকে কক্ষ থেকে বের হয়ে যান। রোগী ও স্বজনেরা কক্ষের সামনে চিকিৎসকের জন্য অপেক্ষায় থাকতে থাকতে অতিষ্ট হয়ে যান। দুপুর ২ টা পর্যন্ত চিকিৎসককে না পেয়ে এক রোগী তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে গিয়ে ওই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে নালিশ করেন। এছাড়া রোগীরা উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি এই হাসপাতালে এসে অনারারী ও মেডিকেল অ্যাসিস্টেন্টের ব্যবস্থাপত্র নিয়ে ফিরছেন।

হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আব্দুস সামাদ জানান, হাসপাতালের বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবায় সুনাম ফেরাতে নতুন নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। সব কিছুই নিয়মের মধ্যে থাকবে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে তত্ত্বাবধায়ক মন্ত্রনালয়ে লিখিতভাবে জানাবেন।

দেশসেরা হাসপাতালে নানা অনিয়ম

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: পূর্ব কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত