চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা ঝরনার রাণী হিসেবে সারাদেশে পরিচিত। পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে এবারো পর্যটকদের ঢল নেমেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার সাতটি পাহাড়ি প্রাকৃতিক ঝরনায়।
ঈদের দিন বিকেল থেকে রোববার (২ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত মানুষের উপচেপড়া ভীড় ছিলো চোখে পড়ার মতো। অনেকে বন্ধু-সহপাঠি, আবার অনেকে পরিবারের সদস্য, কেউ কেউ আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ঝরনার স্বচ্ছ পানিতে ঘা ভিজিয়েছেন। ঝরনা ছাড়া উপজেলার অন্য পর্যটন স্পটেও মানুষের উপস্থিতি ছিল অনেক।
জানা গেছে, দূর-দূরান্ত থেকে এখানে প্রতিদিন ছুটে আসে ভ্রমণ পিপাসু মানুষ। এবারের ঈদের ছুটিতে মানুষের ঢল নেমেছে খৈয়াছড়া ঝরনা, রূপসী ঝরনা, হরিনাকুন্ড ঝরনা, নাপিত্তাছড়া ঝরনা, সোনাইছড়ি ঝরনা, বোয়ালিয়া ঝরনা ও মেলখুম ট্রেইলে। যদিও চট্টগ্রাম উত্তর বনবিভাগ মেলখুম ট্রেইলে পর্যটকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে। বিধি নিষেধ উপেক্ষা করে পর্যটকরা সেখানেও ছুটছে।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের মেরিন ড্রাইভ খ্যাত সুপার ডাইকের কারণে সৃষ্টি হয়েছে দৃষ্টি নন্দন সমুদ্র সৈকত। এক খরচেই পর্যটকরা দেখার সুযোগা পাচ্ছে পাহাড় ও সমুদ্র। এ যেন এক ঢিলে দুই পাখি শিকার। ‘রথ দেখা ও কলা বেচা’র মতোই পাহাড় দেখতে এসে দেশের দূর দূরান্তের পর্যটকরা বোনাস হিসেবে পাচ্ছেন সমুদ্রতীরে সূর্যাস্ত দেখার সুযোগ। মিরসাইয়ের সমগ্র উপজেলা জুড়েই সৈকত থাকলেও বিশেষ পরিচিতি পেয়েছে সাহেরখালী (ডোমখালী) সমুদ্র সৈকত ও মিরসরাই ইকোনোমিক জোন সৈকত। মানুষের বেশ চাপ রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম লেক মহামায়ায়।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার বড় দারোগাহাট থেকে মস্তান নগর পর্যন্ত বিভিন্ন ঝরনার রাস্তার মুখে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে বাস, মাইক্রো, হাইচ, প্রাইভেটকার দাঁড়িয়ে রয়েছে। এসব গাড়ি করে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসে পর্যটকরা ঝরনা দেখতে গেছেন। আবার অনেকে লোকাল বাসে এসেছেন।
কথা হয় ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে আসা সিডিএম পরিবহনের চালক আব্দুল ওয়াহাবের সাথে। তিনি বলেন, আমি মাসে অন্তত ৩ বার রিজার্ভ ভাড়া নিয়ে এখানে আসি। একেকবার একেক ঝরনায় যায় বাসে আসা লোকজন। মোস্তাকিম নামে এক ভাই সব পর্যটক একত্রিত করে বাস রিজার্ভ করে থাকেন। তিনি আরো বলেন, ঢাকা শহর থেকে রাতে রওয়ানা দিয়ে ভোরে এখানে এসে পৌছাই। এরপর আবার সন্ধ্যায় ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিই।
ঢাকার ওয়ারি থেকে ঘুরতে আসা দম্পতি নুরুল হুদা শামীম ও খালেদা চৌধুরী তিন্নি দম্পতি বলেন, খৈয়াছড়া ঝরনা অনেক সুন্দর। যে কেউ এ ঝরনার প্রেমে পড়তে বাধ্য। তবে আমরা হতাশ হয়েছি এর ব্যবস্থাপনা দেখে। এখানে টিকেট কেটে ঝরনা দেখতে হয়। কিন্তু পর্যটকদের জন্য কোন সুযোগ সুবিধা নেই। নেই তেমন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
রূপসী ঝরনাতে ঘুরতে আসা শিহাব উদ্দিন শিবলু জানান, প্রতি বছর গ্রামের সবাই মিলে আমরা বিভিন্ন পর্যটন স্পটে ঘুরতে যাই। এবারো ঈদের ছুটিতে রূপসী ঝরনায় ঘুরতে এসেছি আমরা ৩০ জনের একটি টিম। রূপসী ঝরনা অনেক সুন্দর। তবে ঝরনায় পানি একটু কম। বেশি পানি থাকলে আরো মজা করা যেতো।
চট্টগ্রাম শহরের পূর্ব মাদারবাড়ি এলাকা থেকে নাপিত্তাছড়া ঝরনায় আসা বেসরকারি চাকরীজীবি তোফায়েল উল্ল্যাহ বলেন, মিরসরাইয়ের পাহাড়ি ঝরনারগুলো অনেক সুন্দর। তবে আমার কাছে বেশি ভালো লাগে নাাপিত্তছড়া ঝরনা। ঝরনাটি এক কথায় অসাধারণ। বর্ষাকালে এর সৌন্দর্য অনেক বেড়ে যায়।
বারৈয়ারঢালা রেঞ্জের সব কটি ঝরনার ইজারা পেয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এএইচ এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটির তত্ত্বাবধায়ক নাজমুল হাসান বলেন, এবারের ঈদের ছুটিতে ঝরনাগুলো ভালো পর্যটক আসছে। আমরা সকল পর্যটককে সাথে গাইড নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, ঝরনার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে না যাওয়া, বিকেল ৫ টার মধ্যে ঝরনা থেকে নিচে নেমে আসা সহ বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি।