সাম্প্রতিক সময়ে সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এবার ডেঙ্গু গত বছরের চেয়েও প্রকট হবে। মৌসুমের শুরুতেই হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর ভিড় দেখা যাচ্ছে। বর্ষার মৌসুম চলায় সামনে যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে, তা না বলে দিলেও চলছে।
ডেঙ্গু থেকে পুরোপুরি সেরে উঠতে সুচিকিৎসার বিকল্প নেই। দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠার জন্য সঠিক খাবার গ্রহণ করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে শরীরে কমে যাওয়া প্লাটিলেট সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ব্লিডিং, ডিহাইড্রেশন ইত্যাদির মতো গুরুতর জটিলতা রোধও সহজ হবে।
এডিস মশার কামড়ে মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। ডিইএনভি রোগে মানুষের ডেঙ্গু হয়ে থাকে। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার ৩-১৪ দিনের মধ্যেই আক্রান্ত ব্যক্তির মধ্যে এ রোগের লক্ষণ স্পষ্ট হয়। যার মধ্যে আছে ব্যাপক জ্বর, মাথা ব্যাথা, বমি, মাংসপেশিতে ব্যাথা, হাড়ের সংযোগস্থলে ব্যাথা, ত্বকে র্যাশ ইত্যাদি।
এসব লক্ষণ দেখা দিলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও ভিটামিনে ভরপুর খাবার দিয়ে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজনীয়। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার পর রোগী শক্ত খাবার সহজেই খেতে পারে না। তাই এ সময়ে তরল খাবার খাওয়াটাই শ্রেয়। অল্প অল্প করে তরল খাবার খেলে শরীরের পানির ঘাটতি পূরণের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে তাপমাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
রোগী যখন ডেঙ্গু থেকে উত্তরণের ধাপে থাকে, তখন তাকে দ্বিতীয় ধাপে সহজে হজমযোগ্য খাবার খাওয়ানো যেতে পারে। এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে- খিচুড়ি, দই, ভাত, পোরিজ, সিদ্ধ আলু, সিদ্ধ শাকসবজি যেমন পেঁপে, কুমড়ো, সবুজ মটর ইত্যাদি।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে রোগীর খাবারের রুচি আর মুখের স্বাদ চলে যায়। তাই স্বাদ বাড়াতে খাবারে লেবুর রস ব্যবহার করা যেতে পারে। নরম খাবারের পাশাপাশি ফলের রস, স্যুপ এবং ডাবের পানির মতো প্রচুর পরিমাণে পানীয় পান করা প্রয়োজন। এগুলো শরীরের পানি এবং ইলেক্ট্রোলাইট ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়তা করবে।
রোগী যখন পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠার কাছাকাছি পৌঁছাবে, তখন তাকে পাকা কলা, পাকা পেঁপে এবং তরমুজের মতো ফলগুলোও খাওয়ানো যেতে পারে। সেই সঙ্গে রোগী যখন ধীরে ধীরে আরও সুস্থতা অর্জন করবেন, তখন তৃতীয় ধাপে তাকে স্বাভাবিক সময়ের মতো পুষ্টিকর খাবার দেওয়া যেতে পারে।
বিশেষভাবে যেসব মনে রাখতে হবে
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলে শরীরে প্রচুর পানির ঘাটতি তৈরি হয়। শরীরে পানির ঘাটতি পূরণ অত্যাবশ্যকীয়। এক্ষেত্রে ডাবের পানি, লেবুর পানি, আদা পানি, ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশন (ওআরএস) বেশ কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
ডাবের পানিতে প্রচুর পরিমাণে ইলেক্ট্রোলাইট ও পুষ্টি থাকে। ভিটামিন সির ভালো উৎস হওয়ার পাশাপাশি লেবুর পানি শরীর থেকে ক্ষতিকর উপাদান বের করে দিতে পারে। আদা পানি অনেক ডেঙ্গু রোগীর বমি বমি ভাব মোকাবিলায় সহায়তা করে। এছাড়া, ওআরএস শরীরে অত্যাবশ্যক পটাসিয়াম সরবরাহ করে।
পানির ঘাটতি পূরণের সঙ্গে সঙ্গে প্লাটিলেট সংখ্যা বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে। প্লাটিলেট সংখ্যা বাড়াতে ভিটামিন কে বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে রোগীকে ব্রোকলি খাওয়ানো যেতে পারে, কারণ এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং খনিজে (মিনারেল) পরিপূর্ণ।
প্লাটিলেট সংখ্যা বাড়াতে ভিটামিন কে এর আরেকটি উৎস হতে পারে পালং শাক। আয়রন, পটাসিয়াম এবং ফাইটোনিউট্রিয়েন্টসমৃদ্ধ হওয়ায় প্লাটিলেট সংখ্যা বাড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্লাটিলেট বাড়াতে ডালিমও বেশ কার্যকর। কারণ এতে পুষ্টি, আয়রন এবং খনিজ থাকায় তা শরীরকে প্রয়োজনীয় শক্তি সরবরাহ করে এবং ক্লান্তির অনুভূতি কমায়।
পেঁপে পাতা পাপাইন এবং কাইমোপাপাইন এনজাইম সমৃদ্ধ। আমাদের দেশে খুব বেশি জনপ্রিয় না হলেও প্লাটিলেট সংখ্যা বাড়ানোর পাশপাশি পেঁপে পাতা ফোলাভাব এবং অন্যান্য হজমজনিত সমস্যা দূর করতে পারে। গরুর দুধের পরিবর্তে ছাগলের দুধ পান করাও এক্ষেত্রে উপকারী বলে বিবেচিত হয়।
হলুদ একটি এন্টিসেপটিকসমৃদ্ধ খাবার এবং এটি শরীরে মেটাবলিজম বাড়াতে ভূমিকা রাখে। দুধের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে পান করলে ডেঙ্গু জ্বর থেকে দ্রুত সেরে উঠা সম্ভব। মেথি সহজে ঘুমানো এবং যন্ত্রণা হ্রাসের ক্ষেত্রে উপকারী। জ্বর অনেক বাড়তে থাকলে সেটিকে স্থিতিশীল করার জন্যও মেথি গ্রহণ করা যেতে পারে।
কালো আঙুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ এবং রক্তের গঠনের জন্য সহায়ক একটি ফল। পেয়ারাও প্লাটিলেট কাউন্ট বাড়াতে কার্যকরী। ডেঙ্গু রোগীরা বিটরুটের স্যুপ খেতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণে পানি, ভিটামিন (বি৯, ভিটামিন সি), খনিজ পদার্থ (ম্যাঙ্গানিজ, পটাসিয়াম, আয়রন) রয়েছে। এগুলো রক্তের লোহিত রক্ত কণিকার পরিমাণ বাড়াতে খুব সহায়ক। টমেটো স্যুপ ভিটামিন সি এবং পটাসিয়াম সমৃদ্ধ।