শোকাবহ মিরসরাই ট্র্যাজেডির আজ ১২ বছর। আজকের এই দিনে ২০১১ সালের ১১ জুলাই মর্মান্তিক এক সড়ক দুর্র্ঘটনায় ৪৩ জন শিক্ষার্থীসহ ৪৫ জন নিহত হয়ে ইতিহাস রচিত হয়েছিলো। এখনো সেই দুঃসহ স্মৃতি মনে উঠলে আঁতকে উঠেন নিহতদের স্বজনরা। প্রতিবছরের মতো এবারো নিহতদের স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে আবুতোরাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি।
মায়ের চাপা কান্নাকে উস্কে দিতে বছর ঘুরে আবারো বেদনা হয়ে ফিরেছে ১১ জুলাই। একযুগ আগের ১১ জুলাইয়ের কথা মনে পড়তেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সন্তান হারানো মায়েরা। এ কান্নার শেষ কোথায় জানে না কেউই। সারা বছর হারানো ছেলেকে ভুলে থাকতে পারলেও নিষ্পাপ কোমলমতি সন্তানদের এ দিনে ভুলে থাকতে পারেন না কোনো মা।
প্রতিবছর ১১ জুলাই এলে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন নিহতদের পরিবার, স্বজন, স্কুলশিক্ষকরা তথা সমগ্র মিরসরাই। হারানো সন্তানদের ছবি বুকে আঁকড়ে ধরে হাউমাউ করে বাবা-মায়েদের কাঁদতে দেখা যায় প্রতিবছরই। কারো বা চোখের পানি ঝরতে ঝরতে এখন হয়ে গেছেন মরা পাথর। চাইলেও কাঁদতে পারেন না এখন তারা।
কথা হয় জুলাই ট্রাজেডি থেকে বেঁচে ফেরা তৎকালীন নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সোহরাব হোসেনের সাথে। সোহরাব বলেন, ‘আমরা খেলায় জেতার খুশিতে এতটাই বিমোহিত ছিলাম যে কখন আমরা রাস্তার পাশে খাদের পানিতে পড়ে ট্রাক চাপা পড়েছি কিছুই বলতে পারব না। শুধু দেখছিলাম চারিদিকে বিদঘুটে অন্ধকার। আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল। আমি বুঝতে পারছিলাম আমি হয়তো মারা যাচ্ছি। বের হওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে হাত পা নাড়াতে থাকি। আমার মতো অন্যরাও চেষ্টা করেছে। একটা সময় আমি বের হতে পারি। অন্যরা পানির ভেতর থেকে টানাটানি করে আমার হাত পা নখ দিয়ে কেটে ফেলেছিল।’
তিনি আরো বলেন, ‘যখন আমি পানি থেকে উঠে উপরে আসি, তখনো বিশ্বাস হচ্ছিল না আমি বেঁচে আছি। আমার হাত পা নিথর হয়ে যায় । তারপর আর কিছুই আমার মনে নেই। আমাকে বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এরপরই আমি অসুস্থ হয়ে যাই। বেশ কিছুদিন হাসপাতালে থাকার পর সুস্থ’ হয়ে বাড়ি ফিরি। আমি বেঁচে ফিরেছি, অন্যরা মারা গেছে এটা মনে হতেই আমার খুব কষ্ট হয়।’
বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টের খেলা দেখে ফেরার পথে নিহত হওয়া ছাত্রদের স্বজনদের সমবেদনা জানাতে সে সময় ছুটে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি মরহুম এইচ এম এরশাদ, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দৌজা চৌধুরীসহ দেশের বিশিষ্টজনরা।
নিহত ছাত্রদের স্মরণে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশমুখে স্থাপন করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’। যার নির্মাতা নিজাম মেস্ত্রি। তার ছেলেও নিহত হয় মিরসরাই ট্রাজেডিতে।
ট্র্যাজেডিতে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৪ জন, আবুতোরাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪ জন, আবুতোরাব ফাজিল মাদরাসার ২ জন, প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের ২ জন শিক্ষার্থী ছিল। এছাড়া একজন অভিভাবক ও দুজন ফুটবলপ্রেমীও মারা যান।
আবুতোরাব বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মর্জিনা আক্তার বলেন, ১১ জুলাইয়ে নিহতদের স্মরণে বিভিন্ন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে। স্কুলের উদ্যোগে প্রতিবছর এ কার্যক্রম হয়ে থাকে। এই দিবসটিকে সমগ্র মিরসরাই উপজেলাব্যাপী পালন করা উচিত। কেননা যারা নিহত হয়েছে সবাই শিক্ষার্থী এই মিরসরাইয়ের সন্তান । আমাদের সকলের দায়িত্ব তাদের স্মরণ করা। এটি শুধু একা আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের দায়িত্ব নয়।