সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদন শতবার পেছানোর কারণ কী?

ডেস্ক এডিটর এজেড নিউজ বিডি, ঢাকা
সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদন শতবার পেছানোর কারণ কী?

সাংবাদিক দম্পতি সারোয়ার সাগর ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের এক দশক পেরিয়ে গেছে। এখনো হত্যাকাণ্ডের কারণ বা রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে, সোমবার (৭ আগস্ট) শততমবারের মতো আদালতে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ পিছিয়েছে। প্রতিনিয়ত মামলার প্রতিবেদন জমার তারিখ পেছানোয় নিহতদের পরিবারে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।

স্বজনদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাবেই একযুগ পেরিয়ে যাওয়ার পরও আটকে আছে মামলাটির কার্যক্রম। তাদের ক্ষোভ, সরকার আন্তরিক না হলে তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন করলেও ফলাফল আসবে না।

গত ২২ জুন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন জমার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু র‌্যাব প্রতিবেদন না দেওয়ায় ৭ আগস্ট পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন আদালত।

সাংবাদিক দম্পতির স্বজনদের দাবি, এতবার তারিখ পেছানোর মধ্য দিয়ে মামলাটিতে তদন্ত সংস্থার ব্যর্থতা প্রকাশ পাচ্ছে। তবে র‌্যাবের দাবি, মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনাস্থলে আলামত না পাওয়া এবং বিদেশ থেকে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট আশাব্যঞ্জক না হওয়ায় এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। আদালতে প্রতিবারই এ বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয় এবং এ কারণেই আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য সময় দিচ্ছেন।

নিহতের পরিবার কী বলছে?

মামলার বাদী মেহেরুন রুনির ভাই নওশাদ আলম রোমান বলেন, “র‌্যাব অনেক ঘটনায় তদন্ত করে রহস্য উন্মোচন করেছে। তবে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের মামলাটির এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা করতে পারেনি।”

তিনি আরো বলেন, “র‌্যাব আদৌ মামলাটির তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিতে পারবে কি-না তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।” যদি তারা দিতে পারতো তাহলে অনেক আগেই দিয়ে দিতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নওশাদ আলম রোমানের দাবি, ঘটনাস্থল থেকে আলামত জব্দ করা হয়েছে। যদিও র‌্যাব বলছে, আলামত অনেকাংশেই নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, “মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। অধিকতর তদন্তের জন্য তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন বা অন্য কোনো সিদ্ধান্ত আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ীই হবে।”

নওশাদ আলম রোমান বলেন, “আমরা তদন্ত সংস্থা পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদন করব না। তদন্ত সংস্থা যতই পরিবর্তন হোক, সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক না হলে এর সুরাহা হবে না।”

র‍্যাব কী বলছে?

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এই মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। র‌্যাবের কাছে যখন মামলাটি হস্তান্তর করা হয়, তখন আলামত হিসেবে সেরকম কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। কোনো পায়ের ছাপও সেভাবে পাওয়া যায়নি।”

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যে রিপোর্ট এসেছে, সেখানেও আশানুরূপ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আরো কিছু রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে টেস্টের জন্য। সব বিষয় মাথায় রেখেই মামলাটির তদন্তকাজ শেষ করে একটি সিদ্ধান্তে আসতে তদন্ত কর্মকর্তা সবদিক খতিয়ে দেখছেন।”

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, “এখন পর্যন্ত এ মামলার কোনো তদন্ত প্রতিবেদন পাইনি।”

আলোচিত এ মামলায় এখন পর্যন্ত ছয়জন তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে। বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মোহাম্মদ শহিদুল আলম সপ্তম ব্যক্তি। তিনি বলেন, “মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্ব সহকারে মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।”

আলামতের অবস্থা

মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত আদালতে ১০ বার অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলাটি যথাযথভাবে তদন্তের লক্ষ্যে জব্দ করা আলামত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতিক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিপেরডেন্ট ফরেনসিক সার্ভিসে পাঠানো হয়েছে।

ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়, আগে পাঠানো আলামত এবং গ্রেপ্তার আসামিদের মুখের সোয়াব পর্যালোচনায় অজ্ঞাতনামা দুই পুরুষের ডিএনএ পাওয়া গেছে। তাদের চিহ্নিতের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে প্যারাবন স্ন্যাপশট নামের যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি ডিএনএ ল্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

প্যারাবন স্ন্যাপশট ডিএনএ থেকে অপরাধী বা জড়িত ব্যক্তির ছবি প্রস্তুত করতে পারে। এই ল্যাবের সঙ্গে আগের প্রতিষ্ঠান ইন্ডিপেনডেন্ট ফরেনসিক সার্ভিসের সমন্বয়ের মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ছবি প্রস্তুতের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এই কাজের জন্য প্যারাবন স্ন্যাপশটকে সার্ভিস চার্জ হিসেবে ১,২০০ মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে।

সর্বশেষ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে অগ্রগতি বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য ই-মেইল করা হয়। ল্যাব কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনও কোনো মতামত দেয়নি। ডিএনএ প্রযুক্তির মাধ্যমে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের প্রচেষ্টাসহ মামলার তদন্ত চলছে।

হত্যাকাণ্ড ও মামলা

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। ঘটনার সময় তাদের পাঁচ বছর বয়সী মাহির সরোয়ার মেঘ তার নিজের ঘরে ছিল।

হত্যাকাণ্ডটি দেশব্যাপী বিশেষ করে সাংবাদিকদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তখন থেকে তারা নিহত সাংবাদিক দম্পতির হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে আসছে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তারা বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে।

মামলার কার্যক্রম

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মেহেরুন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশের তদন্ত শেষে মামলাটি স্থানান্তর করা হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে। গোয়েন্দা বিভাগ থেকে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আদালতের নির্দেশে সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার পায় র‌্যাব।

প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই)। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার হস্তান্তর হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার যায় র‍্যাবে।

র‌্যাবের তদন্তকারীরা বারবার বলেছেন, তারা মামলার কাজ করছেন এবং তদন্তকারীরা আদালতে সময় চাইলে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেবেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বরাবরই এজেন্সির সময় আবেদন গ্রহণ করেন। গত ৪ জানুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রশিদুল ইসলাম শেষবারের মতো তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ ৫ মার্চ পর্যন্ত পিছিয়ে দেন।

র‌্যাব এ পর্যন্ত আটবার তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিবেদনেই গুরুত্বপূর্ণ সূত্র খুঁজে পাওয়ার নমুনা দেখা যায়নি। বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মোহাম্মদ শহিদুল আলম ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন।

তদন্তকারীরা এখন পর্যন্ত ২৭ সাংবাদিকসহ ১৫৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং মেঘের বক্তব্যও রেকর্ড করেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত ডিএনএ নমুনার ওপরেও পরীক্ষা চালায়। সাংবাদিক সাগরের হারিয়ে যাওয়া ল্যাপটপে হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কোনো সূত্র থাকতে পারতো। কিন্তু র‌্যাব সেই ল্যাপটপটিও উদ্ধার করতে পারেনি।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদন শতবার পেছানোর কারণ কী?

সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদন শতবার পেছানোর কারণ কী?

সাংবাদিক দম্পতি সারোয়ার সাগর ও মেহেরুন রুনি হত্যাকাণ্ডের এক দশক পেরিয়ে গেছে। এখনো হত্যাকাণ্ডের কারণ বা রহস্য উদঘাটন করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এদিকে, সোমবার (৭ আগস্ট) শততমবারের মতো আদালতে এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ পিছিয়েছে। প্রতিনিয়ত মামলার প্রতিবেদন জমার তারিখ পেছানোয় নিহতদের পরিবারে ক্ষোভ ও হতাশা বাড়ছে।

স্বজনদের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের সদিচ্ছার অভাবেই একযুগ পেরিয়ে যাওয়ার পরও আটকে আছে মামলাটির কার্যক্রম। তাদের ক্ষোভ, সরকার আন্তরিক না হলে তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন করলেও ফলাফল আসবে না।

গত ২২ জুন ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন জমার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু র‌্যাব প্রতিবেদন না দেওয়ায় ৭ আগস্ট পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন আদালত।

সাংবাদিক দম্পতির স্বজনদের দাবি, এতবার তারিখ পেছানোর মধ্য দিয়ে মামলাটিতে তদন্ত সংস্থার ব্যর্থতা প্রকাশ পাচ্ছে। তবে র‌্যাবের দাবি, মামলাটি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ঘটনাস্থলে আলামত না পাওয়া এবং বিদেশ থেকে ডিএনএ টেস্টের রিপোর্ট আশাব্যঞ্জক না হওয়ায় এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যাচ্ছে না। আদালতে প্রতিবারই এ বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হয় এবং এ কারণেই আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য সময় দিচ্ছেন।

নিহতের পরিবার কী বলছে?

মামলার বাদী মেহেরুন রুনির ভাই নওশাদ আলম রোমান বলেন, “র‌্যাব অনেক ঘটনায় তদন্ত করে রহস্য উন্মোচন করেছে। তবে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের মামলাটির এখন পর্যন্ত কোনো সুরাহা করতে পারেনি।”

তিনি আরো বলেন, “র‌্যাব আদৌ মামলাটির তদন্ত শেষে অভিযোগপত্র দিতে পারবে কি-না তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে।” যদি তারা দিতে পারতো তাহলে অনেক আগেই দিয়ে দিতো বলে মন্তব্য করেন তিনি।

নওশাদ আলম রোমানের দাবি, ঘটনাস্থল থেকে আলামত জব্দ করা হয়েছে। যদিও র‌্যাব বলছে, আলামত অনেকাংশেই নষ্ট হয়েছে। তিনি বলেন, “মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন চলছে। অধিকতর তদন্তের জন্য তদন্ত সংস্থা পরিবর্তন বা অন্য কোনো সিদ্ধান্ত আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ীই হবে।”

নওশাদ আলম রোমান বলেন, “আমরা তদন্ত সংস্থা পরিবর্তনের জন্য কোনো আবেদন করব না। তদন্ত সংস্থা যতই পরিবর্তন হোক, সরকার এ বিষয়ে আন্তরিক না হলে এর সুরাহা হবে না।”

র‍্যাব কী বলছে?

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, “সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের মামলাটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এই মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। র‌্যাবের কাছে যখন মামলাটি হস্তান্তর করা হয়, তখন আলামত হিসেবে সেরকম কোনো কিছুই পাওয়া যায়নি। কোনো পায়ের ছাপও সেভাবে পাওয়া যায়নি।”

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা আরও বলেন, “এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডিএনএ পরীক্ষার জন্য যে রিপোর্ট এসেছে, সেখানেও আশানুরূপ কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। আরো কিছু রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে টেস্টের জন্য। সব বিষয় মাথায় রেখেই মামলাটির তদন্তকাজ শেষ করে একটি সিদ্ধান্তে আসতে তদন্ত কর্মকর্তা সবদিক খতিয়ে দেখছেন।”

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অপরাধ তথ্য ও প্রসিকিউশন বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান বলেন, “এখন পর্যন্ত এ মামলার কোনো তদন্ত প্রতিবেদন পাইনি।”

আলোচিত এ মামলায় এখন পর্যন্ত ছয়জন তদন্ত কর্মকর্তা বদল হয়েছে। বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মোহাম্মদ শহিদুল আলম সপ্তম ব্যক্তি। তিনি বলেন, “মামলাটি গুরুত্বপূর্ণ। গুরুত্ব সহকারে মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষ হলে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।”

আলামতের অবস্থা

মামলার নথিপত্র অনুযায়ী, এখন পর্যন্ত আদালতে ১০ বার অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে। সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়, মামলাটি যথাযথভাবে তদন্তের লক্ষ্যে জব্দ করা আলামত ডিএনএ পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতিক্রমে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিপেরডেন্ট ফরেনসিক সার্ভিসে পাঠানো হয়েছে।

ডিএনএ পরীক্ষার প্রতিবেদনে বলা হয়, আগে পাঠানো আলামত এবং গ্রেপ্তার আসামিদের মুখের সোয়াব পর্যালোচনায় অজ্ঞাতনামা দুই পুরুষের ডিএনএ পাওয়া গেছে। তাদের চিহ্নিতের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে প্যারাবন স্ন্যাপশট নামের যুক্তরাষ্ট্রের আরেকটি ডিএনএ ল্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।

প্যারাবন স্ন্যাপশট ডিএনএ থেকে অপরাধী বা জড়িত ব্যক্তির ছবি প্রস্তুত করতে পারে। এই ল্যাবের সঙ্গে আগের প্রতিষ্ঠান ইন্ডিপেনডেন্ট ফরেনসিক সার্ভিসের সমন্বয়ের মাধ্যমে ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের ছবি প্রস্তুতের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। এই কাজের জন্য প্যারাবন স্ন্যাপশটকে সার্ভিস চার্জ হিসেবে ১,২০০ মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে।

সর্বশেষ ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে অগ্রগতি বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য ই-মেইল করা হয়। ল্যাব কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনও কোনো মতামত দেয়নি। ডিএনএ প্রযুক্তির মাধ্যমে সাক্ষ্য-প্রমাণ সংগ্রহের প্রচেষ্টাসহ মামলার তদন্ত চলছে।

হত্যাকাণ্ড ও মামলা

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকার পশ্চিম রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মাছরাঙা টেলিভিশনের বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার ও এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। ঘটনার সময় তাদের পাঁচ বছর বয়সী মাহির সরোয়ার মেঘ তার নিজের ঘরে ছিল।

হত্যাকাণ্ডটি দেশব্যাপী বিশেষ করে সাংবাদিকদের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। তখন থেকে তারা নিহত সাংবাদিক দম্পতির হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবি করে আসছে। তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তারা বলেছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনা হবে।

মামলার কার্যক্রম

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মেহেরুন রুনির ভাই নওশের আলম রোমান বাদী হয়ে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশের তদন্ত শেষে মামলাটি স্থানান্তর করা হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে। গোয়েন্দা বিভাগ থেকে কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় আদালতের নির্দেশে সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের তদন্তভার পায় র‌্যাব।

প্রথমে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন শেরেবাংলা নগর থানার উপপরিদর্শক (এসআই)। চারদিন পর চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার তদন্তভার হস্তান্তর হয় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে। দুই মাসেরও বেশি সময় তদন্ত করে ডিবি রহস্য উদ্ঘাটনে ব্যর্থ হয়। পরে হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হত্যা মামলাটির তদন্তভার যায় র‍্যাবে।

র‌্যাবের তদন্তকারীরা বারবার বলেছেন, তারা মামলার কাজ করছেন এবং তদন্তকারীরা আদালতে সময় চাইলে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ নেবেন। ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত বরাবরই এজেন্সির সময় আবেদন গ্রহণ করেন। গত ৪ জানুয়ারি ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. রশিদুল ইসলাম শেষবারের মতো তদন্ত প্রতিবেদন জমার তারিখ ৫ মার্চ পর্যন্ত পিছিয়ে দেন।

র‌্যাব এ পর্যন্ত আটবার তদন্তের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিবেদনেই গুরুত্বপূর্ণ সূত্র খুঁজে পাওয়ার নমুনা দেখা যায়নি। বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাবের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার মোহাম্মদ শহিদুল আলম ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করেন।

তদন্তকারীরা এখন পর্যন্ত ২৭ সাংবাদিকসহ ১৫৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং মেঘের বক্তব্যও রেকর্ড করেছে। তারা যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেসরকারি ল্যাবরেটরিতে ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত ডিএনএ নমুনার ওপরেও পরীক্ষা চালায়। সাংবাদিক সাগরের হারিয়ে যাওয়া ল্যাপটপে হয়তো গুরুত্বপূর্ণ কোনো সূত্র থাকতে পারতো। কিন্তু র‌্যাব সেই ল্যাপটপটিও উদ্ধার করতে পারেনি।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: পূর্ব কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত