ইলিশের দাম কেন এত বেশি?

ডেস্ক এডিটর এজেড নিউজ বিডি, ঢাকা
ইলিশের দাম কেন এত বেশি?

গত কয়েক বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে দাম বেশি থাকায় বেশিরভাগ মানুষের কাছেই “মাছের রাজা” যেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে মাছের আড়ত এবং বাজারগুলোতে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। তবে সরবরাহের তুলনায় দাম কমেনি তেমন।

সাগরে বেশি বেশি ইলিশ ধরা পড়ায় কক্সবাজারের বাজারগুলোতে দাম কিছুটা কমেছে। ইলিশের উচ্চ মূল্যের জন্য ব্যবসায়ীরা বেশ কয়েকটি কারণের কথা বলেছেন। তাদের দাবি, ইলিশের প্রাপ্যতা, নদী ও সমুদ্রের ইলিশের মধ্যে স্বাদের বৈষম্য, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং পরিবহন ব্যয়ের কারণে ইলিশের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

রাজধানীর অন্যতম বড় বাজার কাওরান বাজারে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১,৫০০ থেকে ১,৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাগর বা নদী থেকে ধরা প্রায় একই ওজনের মাছ কক্সবাজার ও চাঁদপুরে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১,১০০ থেকে ১,২০০ টাকায়। তবে পদ্মা নদীতে ধরা ইলিশ চাঁদপুরে বিক্রি হচ্ছে ১,৬০০ টাকা কেজিতে।

নির্দিষ্ট ধরণের ফ্যাটি অ্যাসিডের উচ্চ উপাদানের কারণে ইলিশের গন্ধ এবং স্বাদ অন্যান্য মাছ থেকে আলাদা। সামুদ্রিক ইলিশে এই ফ্যাটি অ্যাসিড কম থাকে, কারণ ইলিশ মাছ নদীতে সাঁতার কাটার পরে প্রচুর পরিমাণে প্ল্যাঙ্কটন গ্রহণ করে।

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত ২৩ জুলাই। ফলে জেলে, ব্যবসায়ী এবং শ্রমিকদের উপস্থিতিতে বাজার সরগরম হয়ে উঠেছে।

শুক্রবার (২৫ আগস্ট) কাওরান বাজারে ইলিশ কিনতে আসেন মেহেদী হাসান নিলয় নামের এক ক্রেতা। তিনি ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “আমাদের মতো মধ্যম আয়ের মানুষের কাছে ইলিশ খুবই দামি। এ কারণেই আমি আমাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য অন্যান্য বিকল্প কিছু দেখছি।”

যোগাযোগ করা হলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, “আমরা মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের খাদ্য সহায়তাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করি। জেলেদের সহায়তা করে দেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে কাজ করি। তবে আপনি যদি ইলিশের দাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, সেখানে আমার মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই। কারণ আমরা বাজার পর্যবেক্ষণ করতে পারি না।”

তিনি বলেন, “কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং অন্যান্য সরকারী সংস্থা দামের বিষয়ে কথা বলতে পারে, কারণ তারা মনিটরিং কর্তৃপক্ষ। ইলিশের দামের পেছনে কোনো সিন্ডিকেট থাকলে মনিটরিং কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।”

ব্যবসায়ীরা কী বলছেন?

উজ্জ্বল ও মো. আল-আমিন নামের কাওরান বাজারের দুই ব্যবসায়ী ইলিশ বিক্রি করেন। তারা ৩০০ ও ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ যথাক্রমে ৬০০ ও ৭০০ টাকায় বিক্রি করছিলেন। তাদের দাবি, মাছের পরিমাণ কম, তাই দাম বেশি।

মনোজ দে নামের এক ব্যবসায়ী ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “মাছের সংকট ছাড়াও ট্রাক ভাড়া, কুলির ভাড়া, ভ্যান ভাড়া, শ্রমিক খরচ সব মিলিয়ে প্রতি ঝুড়িতে অনেক টাকা খরচ হয়।”

আরেক ব্যবসায়ী কৃষ্ণা রাজবংশী বলেন, “বাজারে পর্যাপ্ত মাছ না আসায় দাম বেশি। মাছগুলো বেছে বেছে ওপারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখানে মাছ কম পাওয়া যায়, যে কারণে দাম বেশি।”

মাছের সরবরাহ ও দামের বিষয়ে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজার মৎস্য আহরণ সমিতির সভাপতি মো. কামাল হোসেন বলেন, “মাছের সরবরাহ খুবই কম। গত মৌসুমে প্রতিদিন দুই হাজার মণ মাছ আসত। সেই পরিমাণের এক তৃতীয়াংশ মাছ এখন আসছে।”

অন্যান্য বিভাগের তুলনায় রাজধানীতে ইলিশের দামের পার্থক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সব জায়গা থেকে এখানে মাছ আসে। আমরা মাছ কেনার সময় বাজারের দাম বিবেচনা করি, একটি জেলায় বিক্রি হওয়া মাছের দাম আমাদের মূল্য নির্ধারণ করে না। তবে মাছ কম থাকলে জেলার চাহিদা মেটে না। জেলা যদি নিজস্ব চাহিদা মেটাতে না পারে তাহলে ঢাকায় মাছ আসবে কী করে?”

চাঁদপুরের মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত বলেন, “এই শুক্রবার প্রায় ৫০ হাজার পর্যটক আসল ইলিশের স্বাদ নিতে চাঁদপুরে এসেছেন। তবে আমরা তাদের সবাইকে আসল ইলিশ দিতে পারিনি।”

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ডা. বিমল দাস বলেন, “এখানে মোটামুটি মাছ ধরা পড়ছে, তবে সামুদ্রিক মাছের সংখ্যা বেশি। নদীর মাছ আসতে একটু সময় লাগবে। গত মাসে ২৫-৩০ হাজার টন মাছ বরিশালে এসেছিল।”

তিনি বলেন, “মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আমরা বা সরকার কেউই মাছের দাম নির্ধারণ করতে পারি না। জেলেরা তাদের দাম অনুযায়ী মাছ ধরে বিক্রি করবে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ বাজারে আসতে শুরু করলে দাম কিছুটা কমে আসবে। তাছাড়া উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত মাছ পৌঁছে যাচ্ছে। এ কারণে মাছের চাহিদা বেড়েছে।”

প্রতি বছর ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে

বিশ্বের ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ইলিশ উৎপাদনে প্রথম। এটিকে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য বলা হয়। ইলিশ শুধু বাংলাদেশেই নয়, এর অনন্য স্বাদ ও গন্ধের জন্য অন্যান্য অনেক দেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়।

বাংলাদেশের প্রায় সাত লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ইলিশ ধরার সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও প্রায় আড়াই মিলিয়ন মানুষ ইলিশের জাল এবং অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরি, বরফ তৈরি, পরিবহন, বিপণন, বিক্রয় এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে জড়িত।

সরকারী তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৯-২০ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল দুই লাখ ১৯,০০০ টন। যেটি ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৬৭,০০০ টনে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে, বর্তমানে ইলিশের সর্বোচ্চ টেকসই ফলন সাত লাখ দুই হাজার টন।

ইলিশ হটস্পট

মোহনা থেকে সমুদ্রের ১,২০০ থেকে ১,৩০০ কিলোমিটার উজানে ও উপকূল থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ইলিশ পাওয়া যায়। দিনে ৭০ থেকে ৭৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ায় ইলিশ সাগর থেকে যতই নদীর মিষ্টি পানির দিকে আসে, ততই এর শরীর থেকে লবণ কমে যায়, স্বাদ বাড়ে।

বর্তমানে দেশের সমুদ্র, মোহনা ও উপকূলসহ ৩৮টি জেলার ১০০টি নদী-নালায় ইলিশ পাওয়া যায়। তবে দেশের ছয়টি উপকূলীয় জেলা ইলিশের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত।

* চাঁদপুর জেলার ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার।

* ভোলা জেলার মদনপুর চর ইলিশা থেকে চর পিয়াল পর্যন্ত সাহাবাজপুর শাখা নদী ৯০ কিলোমিটার।

* ভোলা জেলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী জেলার চর রুস্তম পর্যন্ত তেতুলিয়া নদীর প্রায় ১০০ কিলোমিটার।

* পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদীর পুরো ৪০ কিলোমিটার

* শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা এবং চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার মধ্যে ২০ কিলোমিটার।

* বরিশাল জেলার হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ ও বরিশাল সদর উপজেলার কলাবাদর ও গজারিয়া মেঘনা নদীর প্রায় ৮২ কিলোমিটার।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

ইলিশের দাম কেন এত বেশি?

ইলিশের দাম কেন এত বেশি?

গত কয়েক বছরে দেশে ইলিশের উৎপাদন যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে দাম বেশি থাকায় বেশিরভাগ মানুষের কাছেই “মাছের রাজা” যেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। গত সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে মাছের আড়ত এবং বাজারগুলোতে ইলিশের সরবরাহ বেড়েছে। তবে সরবরাহের তুলনায় দাম কমেনি তেমন।

সাগরে বেশি বেশি ইলিশ ধরা পড়ায় কক্সবাজারের বাজারগুলোতে দাম কিছুটা কমেছে। ইলিশের উচ্চ মূল্যের জন্য ব্যবসায়ীরা বেশ কয়েকটি কারণের কথা বলেছেন। তাদের দাবি, ইলিশের প্রাপ্যতা, নদী ও সমুদ্রের ইলিশের মধ্যে স্বাদের বৈষম্য, জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি এবং পরিবহন ব্যয়ের কারণে ইলিশের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

রাজধানীর অন্যতম বড় বাজার কাওরান বাজারে দেড় কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১,৫০০ থেকে ১,৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সাগর বা নদী থেকে ধরা প্রায় একই ওজনের মাছ কক্সবাজার ও চাঁদপুরে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১,১০০ থেকে ১,২০০ টাকায়। তবে পদ্মা নদীতে ধরা ইলিশ চাঁদপুরে বিক্রি হচ্ছে ১,৬০০ টাকা কেজিতে।

নির্দিষ্ট ধরণের ফ্যাটি অ্যাসিডের উচ্চ উপাদানের কারণে ইলিশের গন্ধ এবং স্বাদ অন্যান্য মাছ থেকে আলাদা। সামুদ্রিক ইলিশে এই ফ্যাটি অ্যাসিড কম থাকে, কারণ ইলিশ মাছ নদীতে সাঁতার কাটার পরে প্রচুর পরিমাণে প্ল্যাঙ্কটন গ্রহণ করে।

বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত ২৩ জুলাই। ফলে জেলে, ব্যবসায়ী এবং শ্রমিকদের উপস্থিতিতে বাজার সরগরম হয়ে উঠেছে।

শুক্রবার (২৫ আগস্ট) কাওরান বাজারে ইলিশ কিনতে আসেন মেহেদী হাসান নিলয় নামের এক ক্রেতা। তিনি ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “আমাদের মতো মধ্যম আয়ের মানুষের কাছে ইলিশ খুবই দামি। এ কারণেই আমি আমাদের প্রোটিনের চাহিদা পূরণের জন্য অন্যান্য বিকল্প কিছু দেখছি।”

যোগাযোগ করা হলে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেন, “আমরা মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের খাদ্য সহায়তাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করি। জেলেদের সহায়তা করে দেশে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে কাজ করি। তবে আপনি যদি ইলিশের দাম সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন, সেখানে আমার মন্ত্রণালয়ের কিছু করার নেই। কারণ আমরা বাজার পর্যবেক্ষণ করতে পারি না।”

তিনি বলেন, “কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এবং অন্যান্য সরকারী সংস্থা দামের বিষয়ে কথা বলতে পারে, কারণ তারা মনিটরিং কর্তৃপক্ষ। ইলিশের দামের পেছনে কোনো সিন্ডিকেট থাকলে মনিটরিং কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে।”

ব্যবসায়ীরা কী বলছেন?

উজ্জ্বল ও মো. আল-আমিন নামের কাওরান বাজারের দুই ব্যবসায়ী ইলিশ বিক্রি করেন। তারা ৩০০ ও ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ যথাক্রমে ৬০০ ও ৭০০ টাকায় বিক্রি করছিলেন। তাদের দাবি, মাছের পরিমাণ কম, তাই দাম বেশি।

মনোজ দে নামের এক ব্যবসায়ী ঢাকা ট্রিবিউনকে বলেন, “মাছের সংকট ছাড়াও ট্রাক ভাড়া, কুলির ভাড়া, ভ্যান ভাড়া, শ্রমিক খরচ সব মিলিয়ে প্রতি ঝুড়িতে অনেক টাকা খরচ হয়।”

আরেক ব্যবসায়ী কৃষ্ণা রাজবংশী বলেন, “বাজারে পর্যাপ্ত মাছ না আসায় দাম বেশি। মাছগুলো বেছে বেছে ওপারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখানে মাছ কম পাওয়া যায়, যে কারণে দাম বেশি।”

মাছের সরবরাহ ও দামের বিষয়ে জানতে চাইলে কারওয়ান বাজার মৎস্য আহরণ সমিতির সভাপতি মো. কামাল হোসেন বলেন, “মাছের সরবরাহ খুবই কম। গত মৌসুমে প্রতিদিন দুই হাজার মণ মাছ আসত। সেই পরিমাণের এক তৃতীয়াংশ মাছ এখন আসছে।”

অন্যান্য বিভাগের তুলনায় রাজধানীতে ইলিশের দামের পার্থক্যের বিষয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সব জায়গা থেকে এখানে মাছ আসে। আমরা মাছ কেনার সময় বাজারের দাম বিবেচনা করি, একটি জেলায় বিক্রি হওয়া মাছের দাম আমাদের মূল্য নির্ধারণ করে না। তবে মাছ কম থাকলে জেলার চাহিদা মেটে না। জেলা যদি নিজস্ব চাহিদা মেটাতে না পারে তাহলে ঢাকায় মাছ আসবে কী করে?”

চাঁদপুরের মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শবে বরাত বলেন, “এই শুক্রবার প্রায় ৫০ হাজার পর্যটক আসল ইলিশের স্বাদ নিতে চাঁদপুরে এসেছেন। তবে আমরা তাদের সবাইকে আসল ইলিশ দিতে পারিনি।”

বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ডা. বিমল দাস বলেন, “এখানে মোটামুটি মাছ ধরা পড়ছে, তবে সামুদ্রিক মাছের সংখ্যা বেশি। নদীর মাছ আসতে একটু সময় লাগবে। গত মাসে ২৫-৩০ হাজার টন মাছ বরিশালে এসেছিল।”

তিনি বলেন, “মুক্তবাজার অর্থনীতিতে আমরা বা সরকার কেউই মাছের দাম নির্ধারণ করতে পারি না। জেলেরা তাদের দাম অনুযায়ী মাছ ধরে বিক্রি করবে। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ বাজারে আসতে শুরু করলে দাম কিছুটা কমে আসবে। তাছাড়া উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে দ্রুত মাছ পৌঁছে যাচ্ছে। এ কারণে মাছের চাহিদা বেড়েছে।”

প্রতি বছর ইলিশের উৎপাদন বাড়ছে

বিশ্বের ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ইলিশ উৎপাদনে প্রথম। এটিকে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ এবং ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য বলা হয়। ইলিশ শুধু বাংলাদেশেই নয়, এর অনন্য স্বাদ ও গন্ধের জন্য অন্যান্য অনেক দেশেও ব্যাপক জনপ্রিয়।

বাংলাদেশের প্রায় সাত লাখ মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ইলিশ ধরার সঙ্গে জড়িত। এছাড়াও প্রায় আড়াই মিলিয়ন মানুষ ইলিশের জাল এবং অন্যান্য সরঞ্জাম তৈরি, বরফ তৈরি, পরিবহন, বিপণন, বিক্রয় এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে জড়িত।

সরকারী তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯৯-২০ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিল দুই লাখ ১৯,০০০ টন। যেটি ২০২১-২২ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ ৬৭,০০০ টনে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের মতে, বর্তমানে ইলিশের সর্বোচ্চ টেকসই ফলন সাত লাখ দুই হাজার টন।

ইলিশ হটস্পট

মোহনা থেকে সমুদ্রের ১,২০০ থেকে ১,৩০০ কিলোমিটার উজানে ও উপকূল থেকে ২৫০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ইলিশ পাওয়া যায়। দিনে ৭০ থেকে ৭৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দেওয়ায় ইলিশ সাগর থেকে যতই নদীর মিষ্টি পানির দিকে আসে, ততই এর শরীর থেকে লবণ কমে যায়, স্বাদ বাড়ে।

বর্তমানে দেশের সমুদ্র, মোহনা ও উপকূলসহ ৩৮টি জেলার ১০০টি নদী-নালায় ইলিশ পাওয়া যায়। তবে দেশের ছয়টি উপকূলীয় জেলা ইলিশের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত।

* চাঁদপুর জেলার ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুর জেলার চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার।

* ভোলা জেলার মদনপুর চর ইলিশা থেকে চর পিয়াল পর্যন্ত সাহাবাজপুর শাখা নদী ৯০ কিলোমিটার।

* ভোলা জেলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালী জেলার চর রুস্তম পর্যন্ত তেতুলিয়া নদীর প্রায় ১০০ কিলোমিটার।

* পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদীর পুরো ৪০ কিলোমিটার

* শরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা এবং চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলার মধ্যে ২০ কিলোমিটার।

* বরিশাল জেলার হিজলা, মেহেন্দিগঞ্জ ও বরিশাল সদর উপজেলার কলাবাদর ও গজারিয়া মেঘনা নদীর প্রায় ৮২ কিলোমিটার।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: পূর্ব কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত