তিন মাস ধরে নিরব ছিল সুন্দরবন। বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) সুন্দরবনে প্রবেশের তিন মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়।
এই তিন মাসে আপন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ফিরেছে সুন্দরবন। গাছে গাছে বানরের অবাধ চলাফেরা, পাখির কলরব, নদীর তীরে পাখির ঝাক, হরিণেরা ছোটাছুটি, রয়েল বেঙ্গল টাইগাররের রাজকীয় ঘোরাফেরা বেড়েছে। বনরক্ষীদের অফিস পাড়ায় পর্যন্ত দেখা গেছে এই বাঘ। স্থানীয় বাসিন্দারা বনের এই অপার সৌন্দর্যের কথা জানিয়েছেন।
তবে বনের নিরবতা ভাঙছে এবার। বন্যপ্রাণীর এই রাজ্যে বাড়বে জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ পর্যটকদের পদচারণা। পর্যটকরা উপভোগ করবেন সুন্দরবনে নয়নাভিরাম প্রকৃতিক সৌন্দর্য।
সংশ্লিষ্টদের কাছে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, শুক্রবার নিষেধাজ্ঞা থেকে ফেরার প্রথম দিনে সুন্দরবন যাচ্ছে ৯টি জাহাজ। এ জাহাজগুলোতে দেশি-বিদেশি ৩৪৯ জন পর্যটক থাকবেন।
সুন্দরবন একাডেমির পরিচালক ফারুক আহমেদ, বলেন, “তিন মাসের নিষেধাজ্ঞার ফলে সুন্দরবনের কোলাহলমুক্ত পরিবেশে বন্যপ্রাণীরা অবাধে চলাফেরা করেছে। বনও জেগেছে নিজের মতো করে। বনকেন্দ্রীক সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে বনের প্রাকৃতিক জাগরণ ঠিক রাখা সম্ভব।”
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের কর্মকর্তা ড. আবু নাসের মোহসিন হোসেন বলেন, “মূলত প্রজনন মৌসুম হওয়ায় তিন মাস সুন্দরবনে সব ধরনের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকে। সেই উদ্দেশ্য পুরোটাই সফল হয়েছে। টহল দলও তৎপর ছিল। ফলে বনে এখন হরিণের শাবক দেখা যাচ্ছে। নতুন গাছপালা জন্মেছে।”
সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের কর্মকর্তা মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, “নিষেধাজ্ঞা শেষে সুন্দরবনে প্রবেশে পর্যটক ও বনজীবীদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে বনের পরিবেশ ঠিক রাখতে আমরা কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। সুন্দরবনে প্রবেশ করার সময় একবার ব্যবহৃত কোনো প্লাস্টিকের পণ্য সঙ্গে নেওয়া যাবে না।”
বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সুন্দরবন বর্তমানে ১১৪টি রয়েল বেঙ্গল টাইগার, দুই লাখ হরিণসহ ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী, সুন্দরীসহ ৩৩৪ প্রজাতির গাছপালা, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল, ১৩ প্রজাতির অর্কিড ও ৩০০ প্রজাতির পাখি রয়েছে।
সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ১,৮৭৪ বর্গ কিলোমিটার জলভাগে কুমির, ৬ প্রজাতির ডলফিনসহ ২৯১ প্রজাতির মাছ রয়েছে। ৬,০১৭ বর্গকিলোমিটারের সুন্দরবনে রয়েছে ৪০০ নদী-নালা ও ২০০ খাল। বাঘ, হরিণ, শূকরসহ ২৮৯ প্রজাতির স্থল ও জলজ প্রাণী বাস করে এই বনে। আছে ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৮ প্রজাতির উভচর এবং বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী।
মাছ ও অন্যান্য বন্যপ্রাণীর প্রজনন মৌসুম হওয়ায় জুন, জুলাই ও আগস্ট এই তিন মাস সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ সময়ে বনে প্রবেশ করতে পারেন না জেলে, বাওয়ালি, মৌয়াল কিংবা পর্যটকরা।