সাতক্ষীরায় সেবার নামে ২২০ ক্লিনিকে রমরমা বানিজ্য, নিরবে প্রশাসন

সাতক্ষীরায় সেবার নামে ২২০ ক্লিনিকে রমরমা বানিজ্য, নিরবে প্রশাসন
সাতক্ষীরায় সেবার নামে ২২০ ক্লিনিকে রমরমা বানিজ্য, নিরবে প্রশাসন

পাটকেলঘাটার চৌগাছা গ্রামের চার ভাইবোন শুধু কাঁদছে। সদ্যজাত শিশুটিও হারিয়েছে তার মাকে। সিজার করতে গিয়ে (রবিবার ২৫ ডিসেম্বর) অপারেশন টেবিলেই মারা যায় গৃহবধু জাজিরা বেগম। এলাকাবাসী ঘেরাও করে ক্লিনিকটি। নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে লোকনাথ নাসিং হোম সেন্টার কর্তৃপক্ষ। পায়ে হেঁটে ক্লিনিকে ভর্তি হওয়া সুস্থ স্বাভাবিক মানুষটি কেনইবা মারা গেলে সেটির কোন সদুত্তর দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অজানাই রয়ে গেল সেই রহস্য।

ক্লিনিকে সেবার নামে মানুষের জীবন এখন হুমকিতে। অপারেশন টেবিলেই কারো জীবনের সমাপ্তি আবার অপচিকিৎসায় কেউবা চিরতরে পঙ্গু, কেউ জীবনে বাঁচলেও পার করছেন দুর্বিসহ জীবন। সাতক্ষীরায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে ওঠা এসব ক্লিনিকে নেই দক্ষ স্টাফ ও নার্স। প্রতিনিয়ত ঘটছে অঘটন। স্বাস্থ্য বিভাগ প্রশাসনের এদিকে নেই কোন নজরদারি।

সাতক্ষীরায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে ২২০টি ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টার। এদের মধ্যে এখন লাইসেন্স নবায়ন রয়েছে মাত্র ৭টি ক্লিনিক ও ১২টি ডায়াগণস্টিক সেন্টারের। বাকিগুলো চলছে অবৈধ উপায়ে। সেবার নামে খোলা এসব ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠাণগুলোতে মানুষের জীবন এখন কতটা নিরাপদ আর প্রশাসনই বা কি করছে ? এমন প্রশ্ন সচেতন মানুষের।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ফলেয়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে ট্রলি চালক বাপ্পী শেখ গতবছরের মার্চ মাসের ২১ তারিখে পাটকেলঘাটার লোকনাথ নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৪ হাজার ৫০০ টাকা চুক্তিতে অ্যাপেন্ডিস অপারেশনের জন্য ভর্তি করা হয়।

অ্যাপেন্ডিস অপারেশনের সময় পায়খানার নাড়ী কেঁটে ফেলা হয় তার। সেটিও গোপন করেছিল ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। তবে অন্যত্র পরীক্ষার পর ধরা পড়ে ভুল চিকিৎসার এ ঘটনা। ট্রলি চালক বাপ্পী শেখ জানান, টানা কয়েক মাস চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ হয়নি। তিনি বলেন, লোকনাথ নার্সিং হোমে অ্যাপেন্ডিস অপারেশনের সময় পায়খানার নাড়ী কেঁটে ফেলার কারণে বাহিরে থেকে আরও ৩ বার অপারেশন করা লেগেছে, কোন রকমে বেচেঁ আছি। ডাক্তার বলেছে যতদিন বাচঁব, ততদিন কোন কষ্টের কাজ করতে পারব না। একমাত্র ছেলের দুর্দশা দেখে চোঁখের পানি ফেলে দিন পার করছে পরিবারটি। এধরনের ক্লিনিক বন্ধের দাবিও করছেন গ্রামবাসী।

সড়ক দূর্ঘটনায় পায়ের হাড় ভেঙে যায় তালার চা দোকানী বাচ্চু মির্জার। সুস্থ হয়নি সেও, অপচিকিৎসার কবলে পড়ে চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে তার পা’টি। খুলনার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পা কেঁটে বাদ দেবার পরামর্শ দিলেও আজও বাদ দেননি তিনি। অভাবের সংসার এখন দুই শিশু ছেলে তার কাঁধে।

সরজমিনে লোকনাথ নাসিং হোমে গিয়ে বাস্তব চিত্রে দেখা যায় সেখানে নেই কোন চিকিৎসক। সংবাদকর্মীকে দেখেই দরজা বন্ধ করে দেন স্টাফরা। সেখানে নেই প্রাতিষ্ঠাণিক সনদধারী কোন নার্সও।

অভিযোগের বিষয়ে লোকনাথ নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক পুলক কুমার পাল বলেন, আমার এখানে অনেক রোগী আসেন, এক-দুইটা রোগীর সমস্যা হতেই পারে। ভুলত্রুটি তো থাকতে পারে। তবে অনেকের থেকে আমার ক্লিনিকটি অনেক ভালো বলে দাবি তার।

এবিষয়ে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. সবিজুর রহমান বলেন, লোকনাথ নার্সিং হোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তদন্ত রিপোর্ট পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও সাতক্ষীরায়
লাইসেন্স বিহীন যেসমস্ত অবৈধ ক্লিনিক গড়ে উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, গত ১০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য সচিব ড. মুহা: আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি। অবৈধভাবে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুললেই সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন সবিজুর রহমানকে মামলা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মুহা: আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। কিন্ত ২ মাস পার হলেও সিভিল সার্জন একবারও স্বাস্থ্য সচিবের ওই নির্দেশনা মানেননি। এখন সাধারণ মানুষের প্রশ্ন? তাহলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ভূমিকা কি? ।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

সাতক্ষীরায় সেবার নামে ২২০ ক্লিনিকে রমরমা বানিজ্য, নিরবে প্রশাসন

সাতক্ষীরায় সেবার নামে ২২০ ক্লিনিকে রমরমা বানিজ্য, নিরবে প্রশাসন
সাতক্ষীরায় সেবার নামে ২২০ ক্লিনিকে রমরমা বানিজ্য, নিরবে প্রশাসন

পাটকেলঘাটার চৌগাছা গ্রামের চার ভাইবোন শুধু কাঁদছে। সদ্যজাত শিশুটিও হারিয়েছে তার মাকে। সিজার করতে গিয়ে (রবিবার ২৫ ডিসেম্বর) অপারেশন টেবিলেই মারা যায় গৃহবধু জাজিরা বেগম। এলাকাবাসী ঘেরাও করে ক্লিনিকটি। নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি করে লোকনাথ নাসিং হোম সেন্টার কর্তৃপক্ষ। পায়ে হেঁটে ক্লিনিকে ভর্তি হওয়া সুস্থ স্বাভাবিক মানুষটি কেনইবা মারা গেলে সেটির কোন সদুত্তর দিতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। অজানাই রয়ে গেল সেই রহস্য।

ক্লিনিকে সেবার নামে মানুষের জীবন এখন হুমকিতে। অপারেশন টেবিলেই কারো জীবনের সমাপ্তি আবার অপচিকিৎসায় কেউবা চিরতরে পঙ্গু, কেউ জীবনে বাঁচলেও পার করছেন দুর্বিসহ জীবন। সাতক্ষীরায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে ওঠা এসব ক্লিনিকে নেই দক্ষ স্টাফ ও নার্স। প্রতিনিয়ত ঘটছে অঘটন। স্বাস্থ্য বিভাগ প্রশাসনের এদিকে নেই কোন নজরদারি।

সাতক্ষীরায় ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে ২২০টি ক্লিনিক ও ডায়াগণস্টিক সেন্টার। এদের মধ্যে এখন লাইসেন্স নবায়ন রয়েছে মাত্র ৭টি ক্লিনিক ও ১২টি ডায়াগণস্টিক সেন্টারের। বাকিগুলো চলছে অবৈধ উপায়ে। সেবার নামে খোলা এসব ব্যবস্যা প্রতিষ্ঠাণগুলোতে মানুষের জীবন এখন কতটা নিরাপদ আর প্রশাসনই বা কি করছে ? এমন প্রশ্ন সচেতন মানুষের।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ফলেয়া গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে ট্রলি চালক বাপ্পী শেখ গতবছরের মার্চ মাসের ২১ তারিখে পাটকেলঘাটার লোকনাথ নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৪ হাজার ৫০০ টাকা চুক্তিতে অ্যাপেন্ডিস অপারেশনের জন্য ভর্তি করা হয়।

অ্যাপেন্ডিস অপারেশনের সময় পায়খানার নাড়ী কেঁটে ফেলা হয় তার। সেটিও গোপন করেছিল ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। তবে অন্যত্র পরীক্ষার পর ধরা পড়ে ভুল চিকিৎসার এ ঘটনা। ট্রলি চালক বাপ্পী শেখ জানান, টানা কয়েক মাস চিকিৎসা নিয়েও সুস্থ হয়নি। তিনি বলেন, লোকনাথ নার্সিং হোমে অ্যাপেন্ডিস অপারেশনের সময় পায়খানার নাড়ী কেঁটে ফেলার কারণে বাহিরে থেকে আরও ৩ বার অপারেশন করা লেগেছে, কোন রকমে বেচেঁ আছি। ডাক্তার বলেছে যতদিন বাচঁব, ততদিন কোন কষ্টের কাজ করতে পারব না। একমাত্র ছেলের দুর্দশা দেখে চোঁখের পানি ফেলে দিন পার করছে পরিবারটি। এধরনের ক্লিনিক বন্ধের দাবিও করছেন গ্রামবাসী।

সড়ক দূর্ঘটনায় পায়ের হাড় ভেঙে যায় তালার চা দোকানী বাচ্চু মির্জার। সুস্থ হয়নি সেও, অপচিকিৎসার কবলে পড়ে চিরতরে নষ্ট হয়ে গেছে তার পা’টি। খুলনার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক পা কেঁটে বাদ দেবার পরামর্শ দিলেও আজও বাদ দেননি তিনি। অভাবের সংসার এখন দুই শিশু ছেলে তার কাঁধে।

সরজমিনে লোকনাথ নাসিং হোমে গিয়ে বাস্তব চিত্রে দেখা যায় সেখানে নেই কোন চিকিৎসক। সংবাদকর্মীকে দেখেই দরজা বন্ধ করে দেন স্টাফরা। সেখানে নেই প্রাতিষ্ঠাণিক সনদধারী কোন নার্সও।

অভিযোগের বিষয়ে লোকনাথ নার্সিং হোম এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক পুলক কুমার পাল বলেন, আমার এখানে অনেক রোগী আসেন, এক-দুইটা রোগীর সমস্যা হতেই পারে। ভুলত্রুটি তো থাকতে পারে। তবে অনেকের থেকে আমার ক্লিনিকটি অনেক ভালো বলে দাবি তার।

এবিষয়ে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা. মো. সবিজুর রহমান বলেন, লোকনাথ নার্সিং হোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তদন্ত রিপোর্ট পেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এছাড়াও সাতক্ষীরায়
লাইসেন্স বিহীন যেসমস্ত অবৈধ ক্লিনিক গড়ে উঠেছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, গত ১০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করেন স্বাস্থ্য সচিব ড. মুহা: আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সাথে বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন তিনি। অবৈধভাবে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার খুললেই সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন সবিজুর রহমানকে মামলা দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মুহা: আনোয়ার হোসেন হাওলাদার। কিন্ত ২ মাস পার হলেও সিভিল সার্জন একবারও স্বাস্থ্য সচিবের ওই নির্দেশনা মানেননি। এখন সাধারণ মানুষের প্রশ্ন? তাহলে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ভূমিকা কি? ।

এজেড নিউজ বিডি ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

Download
ঠিকানা: পূর্ব কাজীপাড়া, রোকেয়া সরণি, মিরপুর, ঢাকা-১২১৬ নিবন্ধনের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ে আবেদনকৃত