পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার ৩৪ নং সুবিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ্মা রানী দত্তের বিরুদ্ধে শিশু শিক্ষার্থীদেরকে ক্লাসরুমে খেলাধূলা ও দুষ্টমি করা, তাৎক্ষণিকভাবে তার কথা মতন কাজ না করার অপরাধে বেধরক বেত্রাঘাত ও কিল ঘুষি মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এবিষয়ে অভিভাবকরা প্রধান শিক্ষকের বদলি সহ শাস্তির দাবিতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। প্রধান শিক্ষকের এ অমানুষিক কান্ডের কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করায় ক্লাসে উপস্থিতি কমে গেছে বলেও অভিযোগ অভিভাবকদের।
চতুর্থ শ্রেনির শিক্ষার্থী মহারাজ খান বলে , গত ৬ সেপ্টেম্বর দুপুরের দিকে উজ্জ্বল স্যার ক্লাসে বসে আমাকে অফিস থেকে পানির পট ও খাতা আনতে বলেন। আমি অফিসে পানির পট ও খাতা আনতে গেলে হেড ম্যাডাম পদ্মা রানী আমাকে ক্লাসে গিয়ে উজ্জ্বল স্যারকে অফিসে আসতে বলার জন্য বলেন। তখন আমি ক্লাসে গিয়ে উজ্জ্বল স্যারকে বলি হেড স্যার আপনাকে অফিসে ডাকছেন। সেই সময়ে উজ্জ্বল স্যার বলেন ৭/৮ মিনিট পর ক্লাস শেষ হবে। ক্লাস শেষ করেই যাই। এর কিছু সময় পর হেড ম্যাডাম ক্লাসে এসে কোন কিছু জিজ্ঞেস না করেই আমার মাথা নিচু করে পিঠে কিল ঘুষি মারতে থাকেন। তখন উজ্জ্বল স্যার হেড ম্যাডামকে বলেন ও আমাকে অফিসে যাওয়ার জন্য বলেছে। আমি ক্লাস শেষ করে যাওয়ার কথা বলেছি।এসময় হেড ম্যাডাম আমাকে ১৫/২০ টির মতন কিল ঘুষি মারেন। এতে সে ক্লাসে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
পঞ্চম শ্রেনির ছাত্রী মুসলিমা খাতুন বলে, পরিক্ষার সময় আমার লেখার কাগজের ছিলের অংশ ছিড়ে গিলে আমি হেড ম্যাডামকে নতুন কাগজে ছিল দিয়ে দেয়ার জন্য বললে তিনি কাগজ ছিরলি কেন বলে আমাকে কিল ঘুষি মারতে থাকেন।
চতুর্থ শ্রেনির ছাত্রী মারঝিয়া, তৃতীয় শ্রেনির ছাত্রী মারজানা সহ ক্লাসের ছাত্র /ছাত্রীরা বলেন, হেড ম্যাডাম তাদেরকে ক্লাসে বসে দুষ্টমি ও খেলাধুলা করলে, ক্লাসে পড়া না পারা সহ বিভিন্ন অজুহাতে হাত দিয়ে পিঠে কিল ঘুষি মারেন কখনও পাখা দিয়েও মারেন তাদেরকে। তিনি এত মারেন যে ওইদিন তারা আর ক্লাসও করতে পারে না।
আহত শিক্ষার্থী মহারাজ খানের পিতা এনামুল হক খান বলেন, আমার ছেলে ক্লাসে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্কুলের শিক্ষার্থীরা আমার বাড়িতে খবর দেয়।বাড়ি থেকে ছেলের অসুস্থতার সংবাদ পেয়ে আমি বাড়িতে গিয়ে কি হয়েছে জানতে চাইলে ছেলে তাকে বলে আমি অফিসে গেলে হেড ম্যাডাম উজ্জ্বল তাত্ক্ষণিক অফিসে যাওয়ার জন্য বলেন। উজ্জ্বল স্যার সাথে সাথে অফিসে না যাওয়ায় তিনি কিছু সময় পর ক্লাসে এসে ছেলের মাথা নিচু করে পিঠে ১৫/২০ কিল ঘুষি মারেন। তার শিশু ছেলেকে কখনও তারা নিজেরাও গায়ে হাত দেন না কিন্তু ওই শিক্ষক তার শিশু শিক্ষার্থীর পিঠে কিল ঘুষি দিয়ে গুরুত্বর আহত করেছে।পরে ছেলে কাউখালী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকের প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ঔষধ খাওয়ালেও রাতে প্রচন্ড জ্বরে আক্রান্ত হয়। সে এখন ভয়ে স্কুলেও যেতে চাচ্ছেনা। ওই শিক্ষক স্কুলে থাকলে এ স্কুলে আর তার ছেলেকে পড়াবেন না বলেও জানান তিনি। এই প্রধান শিক্ষক বিভিন্ন সময়ে শিশু শিক্ষার্থীরা ক্লাসে পরা না পাড়ায় এবং ক্লাসে বসে খেলাধুলা ও দুষ্টি করলে ক্লাস রুমে বসে চড় থাপ্পর, বেত্রাঘাত ও পিঠে কিল ঘুষি মারাসহ নানাভাবে শারীরিক নির্যাতন করেন প্রতিনিয়ত।
শিক্ষার্থী অভিভাবক আবু হানিফ জানান, ফুটবল খেলার সময় আমার নাতনি হেড ম্যাডামকে না বলে পানি খেতে গেলে তাকে বেধম কিল ঘুষি মারে। এতে সে প্রসাব করেও দেয়। নাতনিকে মারার কারণ জানতে স্কুলে গেলে তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন এবং আমাকে স্কুল থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। এমনভাবে শিশুদের মারধরা করা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব না। শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের ভয়ে স্কুলে আসতে চাচ্ছে না। তিনি ওই শিক্ষককে স্কুল থেকে সরিয়ে দেয়ার দাবি করেন।
অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক পদ্মা রানী দত্ত জানান, শিক্ষার্থীদের মারধরের বিষয়টি সঠিক না। ওই দিন চতুর্থ শ্রেনির ছাত্র মহারাজ অফিস আসলে আমি তাকে ক্লাসে গিয়ে উজ্জ্বল স্যারকে অফিস আসাতে বলার জন্য বলি। এর পর ১৫/২০ মিনিট অতিবাহিত হলেও উজ্জ্বল স্যার অফিসে না আসায় আমি ওই ক্লাসে গিয়ে মহারাজের কাছে গিয়ে তার পিঠে হাত দিয়ে আদরের সহিত বলি তুমি স্যারকে বলনি আমি যে তাকে অফিসে ডেকেছিলাম। আমি কোন শিক্ষার্থীকে কখনও মারধর করিনা। তাদেরকে আমি সব সময় আদর করি। এলাকার কিছু লোক আমার বিরুদ্ধে এ অপপ্রচার চালাচ্ছে।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ মনিবুর রহমান বলেন , ৩৪ নং সুবিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ্মা রানী দত্তের বিরুদ্ধে শিশু শিক্ষার্থীদের মারধরের বিষয়ে আমি এখনও কোন অভিযোগ পাইনি। তবে এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার স্যার সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে ২/১ দিনের মধ্যে জেলা শিক্ষা অফিসে প্রতিবেদন দেয়া হবে।
এবিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার কুমারেশ চন্দ্র গাছী বলেন ,কাউখালী উপজেলার ৩৪ নং সুবিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ্মা রানী দত্তের বিরুদ্ধে স্কুলের শিক্ষার্থীদের মারধরের বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্তের জন্য উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে বলা হয়েছে।
প্রতিবেদন পেলে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিতপূবর্ক অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।