ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাচ্ছে বরিশাল নগরীর স্বাস্থ্যকর নির্মল পরিবেশ। আধুনিক ও মানসম্মত বর্জ্য ব্যবস্থানার অভাবে যেখানে সেখানে দেখা মিলছে আবর্জনার স্তূপ। সেখানে দুর্গন্ধে টেকা দায়, পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া যায় না। নগরীর উত্তর পশ্চিম অংশের একটি এলাকার নাম ‘ময়লা খোলা’। যেখানে আক্ষরিক অর্থেই আবর্জনা ফেলা হয়। এতে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। সেখান থেকে প্রতিদিন ৩০০ টনের বেশি বর্জ্য অপসারণ করা হলেও তা ‘মোটেই স্বাস্থ্য ও পরিবেশবান্ধব নয়’ বলে পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। প্রায় ৬০ বর্গকিলোমিটার নগরীর কম বেশি ৪৫ হাজার আবাসিক, অনাবাসিক ও বাণিজ্যিক হোল্ডিং থেকে প্রতিদিন গড়ে ৩০০ টনেরও বেশি বর্জ্য এ নগরীর রাস্তাঘাটে জমা হচ্ছে।
গোটা নগরীতে সেকেন্ডারি ডাস্টবিন আছে মাত্র দুটি। ফলে বিভিন্ন বাসাবাড়ির লোকজন উন্মুক্তস্থানে ময়লাআবর্জনা ফেলে রাখছে। নগর ভবনের পরিচ্ছন্ন কর্মীরা দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নগরীর কিছু বাড়িঘর থেকে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে রাস্তাঘাটের নির্দিষ্টস্থানে ফেলে রাখার পরে সেখান থেকে সিটি করপোরেশনের গার্বেজ ট্রাকগুলো এসব বর্জ্য সংগ্রহ করে কাউনিয়া এলাকার ময়লাখোলা বা গার্বেজ স্টেশনে নিয়ে তা অপসারণ করছে। গার্বেজ স্টেশন স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্মত নয়। নগরীর জঞ্জালের পরিমাণ এত বেশি যে, সেখানে আর ধারণ করা যাচ্ছে না। দ্রুত নতুন গার্বেজ স্টেশন চালু না করলে নগরীর পরিবেশ ও স্বাস্থ্য বিপর্যয় ঘটার আশংকাও করছেন পরিবেশবিদসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল মহল। বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ডা. রবিউল ইসলাম নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিভিন্ন মহলের উদ্বেগের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি জানান, জঞ্জাল নিয়ে নগর ভবনও যথেষ্ট সচেতন।
পুরোনো গার্বেজ ইয়ার্ডটির সর্বোচ্চ ব্যবহারের পাশাপাশি তা যতটা সম্ভব স্বাস্থ্য ও পরিবেশসম্মতভাবে ব্যবহারের চেষ্টা করছে। পাশাপাশি নগরীর চরবাড়িয়া এলাকায় বর্জ্য অপসারণে নতুন ডাম্পিং স্টেশন স্থাপনের পদক্ষেপ গ্রহণের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এ লক্ষ্যে ৭ একর জমি হুকুম দখলসহ ভূমি উন্নয়ন ও সীমানা প্রাচীর নির্মাণে ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রণালয়ে একটি ‘প্রকল্প-প্রস্তাবনা’ প্রেরণ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয় থেকে টাকা পেলে পরবর্তী সময়ে এখানে অত্যাধুনিক একটি বর্জ্য অপসারণ কেন্দ্র গড়ে তোলার কথা জানান তিনি। তবে নতুন এ গার্বেজ স্টেশন স্থাপনে কত সময় লাগতে পারে সে সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে না পারলেও তহবিলের সংস্থানের উপরই অনেক কিছু নির্ভর করছে বলে জানান তিনি। জানা গেছে, নগর ভবনের পরিচ্ছন্ন বিভাগসহ নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে প্রায় ৯৫০ পরিচ্ছন্ন কর্মীর কাজসহ তার তত্ত্বাবধান নিয়েও নগরবাসীর মনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে ৩৬ ঘণ্টায় এ নগরীতে ৩৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পরে গোটা মহানগরী ৩ ফুট থেকে ৫ ফুট পর্যন্ত পানির তলায় চলে যায়।
নগরীর পাশে প্রবাহমান কীর্তনখোলা নদীর পানি বিপদসীমার নিচে নেমে যাওয়ার ৪৮ ঘণ্টা পরও জলাবদ্ধতা দূর হয়নি। নগরীর ১৬১ কিলোমিটার পাকা ড্রেনের বেশিরভাগেরই তিন-চতুর্থাংশ পর্যন্ত ভরাট হয়ে গেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি এসব ভরাট ড্রেন বছরের পর বছর ধরে একই অবস্থায় থাকলেও পরিস্থিতির তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না।
নগরীর নবগ্রাম রোডের বটতলা বাজারের পশ্চিম থেকে হাতেম আলী কলেজ পর্যন্ত সড়কটি ঘণ্টায় ৫ মিলি বৃষ্টিতেই প্লাবিত হচ্ছে। এমনকি সারা বছরই ঐ সড়কের পাশের ড্রেনটির পানি উপচে মূল সড়কে ছুঁয়ে থাকলেও তা থেকে উত্তরণের কোনো পদক্ষেপ নেই। আরো খারাপ অবস্থা নগরীর কাঁচা ড্রেনগুলোর।