সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সয়দাবাদ ইউনিয়নের বাঐতারা গ্রামে সংঘর্ষে ২৪জন গুলি বিদ্ধের ঘটনার সময় বৈধ ও অবৈধ ৪টি আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বাদীর অভিযোগ থানায় মামলা করার সময় পুলিশ ৪টি অস্ত্রের কথা এজাহারে উল্লেখ করতে দেয়নি।
এদিকে গুলিবর্ষণকারী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরিফের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে পৃথক আরেকটি মামলা করেছে পুলিশ। পাশাপাশি বিধি বহিৃভূত ভাবে অস্ত্রের ব্যবহার করায় তাঁর অস্ত্রের লাইন্সেস বাতিলের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
গুলিতে আহত বাঐতারা গ্রামের নুর মোহাম্মদের ছেলে শাহিন ও ফরিদুল ইসলাম বলেন, মারামারির সময় সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আরিফ, তাঁর ছোট ভাই শরিফ, চাচাতো ভাই সাব্বির ও ইমন ৪টি অস্ত্র হাতে গুলি করেছে। ওই সময় আরিফের হাতে শর্টগান, শরিফের হাতে বন্দুক ও বাকি দুইজনের হাতে এয়ারগ্যান ছিল।
মামলার বাদী শফিকুল ইসলাম বলেন, মারামারিতে ৪টি অস্ত্রের ব্যবহারের কথা উল্লেখ করে থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম। কিন্তু থানার তদন্ত ওসি নান্নু খান ও এস,আই ইব্রাহিম এজাহারে ৪টি অস্ত্রের কথা উল্লেখ করতে দেয়নি। তাদের কারনেই বাধ্য হয়ে মামলায় শুধু একটি লাইন্সেসকৃত অস্ত্রের কথা উল্লেখ করতে বাধ্য হয়েছি। আশংকা করছি এ মামলায় আমরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হবো।
বাদীকে চাপ প্রয়োগের অভিযোগ অস্বীকার করে সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নান্নু খান জানান, মামলার তদন্তকালে বাদী ও আহতদের করা একাধিক অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ সত্য প্রমানিত হলে তদন্তে সেটি উঠে আসবে। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।
এ বিষয়ে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইব্রাহিম হোসেন জানান, সংঘর্ষের সময় আরিফ লাইন্সেসকৃত অস্ত্র দিয়ে গুলি করলেও তা ছিল বিধি বহিৃভূত। যে কারনে বাদীকে লাইন্সেসকৃত অস্ত্রের কথাই এজাহারে উল্লেখ করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছিল। একাধিক অস্ত্রের ব্যবহারের বিষয়টি তদন্তে প্রমানিত হলে পরবর্তীতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহন করা হবে।
তিনি আরো বলেন, আরিফের লাইন্সেসকৃত বন্দুকের বিপরীতে ১৫৫ রাউন্ড গুলি ইন্সু ছিল। সংঘর্ষের ঘটনার পরই একটি একনালা বন্দুক, একটি এয়ারগ্যান, ৯০টি অব্যবহৃত গুলি ও ২৬টি গুলির ঘোষা জব্দ করা হয়েছে। বাকি ৩৯টি গুলির বিষয়ে আরিফ কোন সঠিক তথ্য দিতে পারেনি। যে কারনে লাইন্সেস করা বন্দুক দিয়ে বিধিভঙ্গ করে গুলি করায় আরিফের বিরুদ্ধে আমি নিজে বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে আলাদ একটি মামলা করেছি। পাশাপাশি তাঁর একনালা বন্দুকের লাইন্সেস বাতিলের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
শরীরে গুলি রেখেই হাসপাতাল থেকে আহতদের ছুটি দেয়া হয়ে বলে জানিয়েছেন গুলিতে আহত ফরিদুল, হৃদয় ও শাহিনসহ অন্যরা।
এ বিষয়ে সিরাজগঞ্জ বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের রেজিষ্টার ও সার্জন মোকলেছুর রহমান মুকুল জানান, হাসপাতালে মোট ২৪জন গুলিবিদ্ধ ব্যক্তি ভর্তি হয়েছিল। এদের প্রত্যেকের শরীরেই একাধিক গুলি ছিল। মাথায় ও পায়ে গুলিবিদ্ধ দুইজনকে অন্যত্র রেফার্ড করা হয়েছে। তিনজনের শরীর থেকে আমরা মাত্র ৬টি গুলি বের করতে পেরেছি। বাকিদের শরীরের থাকা গুলিগুলো দ্রæত স্থান পরিবর্তন করছে, যে কারনে অপারেশন করা সম্ভব হয়নি। তাই দুইদিন পর তাদের হাসপাতাল থেকে ছুটি দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, এসব ছররা গুলি শরীরে থাকলেও তেমন ক্ষতির আশংকা নেই। তারপরও যদি কোন সমস্যা হয়, তাহলে রোগীদের পুনরায় হাসপাতালে আসতে বলা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ৯ জানুয়ারী দুপুরে একটি দলিলের নকল তোলাকে কেন্দ্র করে বাঐতারা গ্রামের দলিল লেখক আলম হোসেন ও রুবেল গ্রæপের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ওই সময় ২৪ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত: ৩০ জন আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে পুলিশ আরিফসহ ৩জনকে আটক করলেও আরিফ ছাড়া বাকি দুইজন পরের দিনই আদালত থেকে জামিনে বের হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত এ ঘটনায় আর কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।