দেশের ৩৮.৯% নারী অস্থিসন্ধির সমস্যায় ভুগছেন। পুরুষের মধ্যে এই হার ২৮.৪%। রবিবার (৮ অক্টোবর) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেন্দ্রীয় সেমিনারে “অস্থিসন্ধির ব্যথা” বিষয়ে দেওয়া বক্তব্যে এমন তথ্য জানান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। এতে তিনটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করা হয়।
বক্তারা জানান, অস্থিসন্ধির সমস্যা শহরের চেয়ে গ্রামে বেশি। গ্রামের ৩৪.৫% মানুষের এই সমস্যা আছে। শহরে তা ৩২.৪%।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রিউমাটোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মেজর (অব.) সৈয়দ জামিল আবদাল বলেন, “পেশি-কঙ্কালের সমস্যার কারণে মানুষ দীর্ঘ সময়ের জন্য ব্যথায় ভোগে, কিছু মানুষ শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়ে এবং অকালমৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”
তিনি বলেন, “দেশের প্রাপ্তবয়স্কদের এক-তৃতীয়াংশ জীবনের কোনো না কোনো সময় অস্থিসন্ধির ব্যথায় ভোগেন। এই হার পুরুষের চেয়ে নারীর মধ্যে বেশি।”
বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় সব বিভাগে চিকিৎসাধীন রোগীদের ব্যথার সমস্যা আছে। ত্বক বা যক্ষ্মার রোগীরাও অস্থিসন্ধির ব্যথায় ভোগে। এমনকি চোখের সমস্যার সঙ্গে নির্দিষ্ট অস্থিসন্ধির ব্যথার সম্পর্ক আছে।”
বিএসএমএমইউর উপাচার্য বলেন, “কোনো রোগী অর্থোপেডিকস না ফিজিক্যাল মেডিসিন, না রিউমাটোলজি বিভাগে চিকিৎসা নেবে, তা নিয়ে কারও কারও দ্বিধা থাকে। এ ক্ষেত্রে রোগী রেফার করা অথবা সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর চিকিৎসকদের নিয়ে বোর্ড গঠন করে রোগীর চিকিৎসা করা নিরাপদ।”
প্রথম উপস্থাপনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু বিভাগের চেয়ারম্যান মানিক কুমার তালুকদার বলেন, “দেশে অস্থিসন্ধি ও পেশি-কঙ্কালের (মাংসপেশির সঙ্গে যেখানে হাড় যুক্ত থাকে) ব্যথায় ভোগা শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। স্কুলগামী ১০%-২০% শিশু ব্যথা বয়ে বেড়াচ্ছে। শিশুদের ব্যথায় ভোগার একটি অন্যতম কারণ ভিটামিন ডির ঘাটতি। কিছু ব্যথার ক্ষেত্রে দেখা গেছে আক্রান্ত শিশুদের ৮০% ভিটামিন ডির ঘাটতিতে আছে।”
মানিক কুমার তালুকদার বলেন, “শিশুর ব্যথার কাহিনি জানার জন্য চিকিৎসকদের বেশি গুরুত্ব দিতে হবে রোগী ও রোগের ইতিহাসের ওপর। ৮০% ব্যথার সঠিক কারণ জানা যায় যদি ইতিহাস ঠিকমতো শোনা বা জানা যায়। শরীর পরীক্ষা করে ১৫% কারণ জানা যায়। আর রোগনির্ণয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ৫% ব্যথা শনাক্ত করা যায়।”
বক্তারা এই সমস্যা নিরসনে রোগী বা সাধারণ মানুষকে সচেতন করার ওপর জোর দেন।
তারা বলেন, ব্যথা মানুষের চলাচলের সময় অনুভূত হতে পারে, মানুষ বিশ্রামে থাকলেও হতে পারে। ব্যথার ফলে অনেক সময় অস্থিসন্ধি দুর্বল হয়ে পড়ে। মানুষ ক্লান্তি বা অবসাদে ভোগে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ বলেন, “শরীরচর্চা, ওষুধ ও বিভিন্ন ধরনের প্রযুক্তি ব্যথা কমাতে পারে। তিনি বলেন, ব্যথা ব্যবস্থাপনার প্রধান উদ্দেশ্য তিনটি যন্ত্রণা বা ব্যথামুক্তি, অস্থিসন্ধির কর্মক্ষমতা ফিরিয়ে আনা এবং অস্থিসন্ধির সুরক্ষা দেওয়া।”
মুক্ত আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএসএমএমইউর সহ-উপাচার্য অধ্যাপক এ কে এম মোশাররফ হোসেন বলেন, ব্যথার চিকিৎসায় সতর্কতার সঙ্গে স্টেরয়েড বা অন্য ওষুধ ব্যবহার করা উচিত। সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় সেমিনার কমিটির সভাপতি অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন সিদ্দিকী।