যশোরে ইউনিয়ন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তারা মাঠে না গিয়ে নিজ কাজে ব্যস্ত থাকেন। আবার অফিসেও ঠিক মতো বসেন না তারা। ফলে সবজি ও ফসল চাষাবাদে তাদের পরামর্শ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চাষিরা।
ভুক্তভোগী চাষিরা জানিয়েছেন, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাঠে দেখা মেলেনা বললেই চলে। অনেকে তাদের ঠিকমতো চেনেন না। অফিসও থাকে তালাবদ্ধ। প্রয়োজনের সময় তাদের খুঁজে নিতে হয়।
উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঠিকভাবে তদারকি ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা না থাকায় তারা ইচ্ছামতো দায়িত্বে অবহেলা করছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি ইউনিয়নে তিনজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কর্মরত রয়েছেন। খাতা কলমে তারা বিভিন্ন ব্লকের দায়িত্ব ভাগ করা আছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী তারা মাঠে মাঠে গিয়ে চাষিদের ফসল উৎপাদনে পরামর্শ দেবেন। পাশাপাশি একে অপরের সাথে নিয়মিত মতবিনিময় করবেন। কিন্তু ভুক্তভোগীদের দাবি অনুযায়ী বাস্তব চিত্র ভিন্ন। অধিকাংশ উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাঠে যান না।
যশোর সদর উপজেলার হৈবতপুর ইউনিয়নের কয়েকজন চাষি জানিয়েছেন, সবজির জন্য বিখ্যাত হৈবতপুর ইউনিয়ন। এখানে বারো মাস সবজির আবাদ হয়ে থাকে। তারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সুনামের সাথে সবজি উৎপাদন করেন। কিন্তু সবজি উৎপাদনে স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ পান না বললেই চলে। তারা মাঠে এসে কোন চাষিকে পরামর্শ দেন না। দেখেন না সবজি ক্ষেতে কোন ত্রুটি আছে কিনা।
শাহবাজপুর গ্রামের আতিয়ার রহমান, শাহাজান আলী জানান, তাদের ব্লকে দায়িত্বরত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা ৬ মাসে একদিনও মাঠে আসেননা। এমনকি তারা তাকে চেনেন না।
হৈবতপুর ইউনিয়নের অনেক চাষি ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপসহকারী কৃষি কর্মকতাদের কর্মকান্ড নিয়ে।
তারা আরও বলেন, বর্ষায় অনেক সবজি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বিপদের সময়ও কোন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাঠে আসেননি। এর আগে অনেক চাষির বেগুন ক্ষেত স্টোকে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। তখনও পরামর্শ দিতে কেউ মাঠে আসেননি।
চুড়ামনকাটি গ্রামের দুইজন সবজি চাষি জানান, ইউনিয়ন পরিষদের এক কোনে কৃষি কর্মকর্তাদের অফিস। দিনের অধিকাংশ সময় অফিসের দরজা থাকে তালাবদ্ধ। তারা মাঠেও যান না। আবার অফিসেও খুঁজে পাওয়া যায়না। দায়িত্ব ফেলে তারা ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত থাকেন।
ঝিকরগাছা উপজেলার হাঁড়িয়া নিমতলা গ্রামের ইউনুস আলী জানান, বিগত দিনে এক বিঘা ধান ক্ষেত কারেন্ট পোকার আক্রমণে নষ্ট হয়ে গেলেও কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ পাননি। তারা কোন সময় মাঠে আসেন না। এলাকার প্রভাবশালী চাষিদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেন তারা। বাঘারপাড়া উপজেলার দহাকোলা গ্রামের রাজিবুল ইসলাম জানান, শুনি কৃষি কর্মকর্তারা দায়িত্বে আছেন, কিন্তু মাঠে তাদের দেখা পাওয়া যায়না। উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সঠিকভাবে দেখভাল না করায় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা অনিয়মের সুযোগ পাচ্ছেন।
এই বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হক জানান, মাঠে গিয়ে চাষিদের সার্বিক বিষয়ে যথাসাধ্য পরামর্শ দেয়ার জন্য যশোরের সকল উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেয়া আছে। তাদের দায়িত্বে অবহেলার বিষয়ে কোন চাষি অভিযোগ করেননি। তারপরেও বিষয়টি খোঁজ নেবেন। অভিযোগের সত্যতা মিললে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।