বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বেশি দামে রেমিট্যান্সের ডলার কেনায় আমদানিতেও এর দাম বাড়ছে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারেও জ্বালানি তেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। ফলে আমদানির খরচ আরও বেড়ে যাবে।
ব্যাংক এখন ১১২ থেকে ১১৪ টাকায় রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে। কয়েকটি ব্যাংক আরও বেশি দামেও কিনছে। চড়া দামে কেনা ডলার তারা বিক্রিও করছে বেশি দামে।
এদিকে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল (আইএমএফ) ডলারের দাম বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার জন্য আবারও চাপ দিচ্ছে।
সূত্র জানায়, গত মাসের শেষদিকে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) সর্বশেষ ডলারের দাম নির্ধারণ করে। এতে রেমিট্যান্সের ডলার সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ও আমদানিতে সর্বোচ্চ ১১০ টাকা ৫০ পয়সা করে বিক্রির নির্দেশনা দেয় ব্যাংকগুলোকে। প্রতি ডলারের ক্রয় ও বিক্রয় মূল্যের মধ্যকার সর্বোচ্চ ব্যবধান থাকতে হবে ১ টাকা।
কিন্তু ছোট ও দুর্বল কয়েকটি ব্যাংক তখনো বাফেদার নির্দেশনা ভঙ্গ করে রেমিট্যান্সের ডলার কিনেছে ১১২ থেকে ১১৪ টাকা করে। ওইসব ডলার তারা সর্বোচ্চ ১১৭ থেকে ১১৮ টাকা করে আমদানিতে বিক্রি করছিল। কোনো কোনো ব্যাংক ১২২ টাকা করেও আমদানিতে ডলার বিক্রি করেছে বলে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন।
এই বাড়তি দামে ডলার বেচাকেনার কোনো বৈধতা ছিল না। তাই বেশি দামে ডলার বিক্রির দায়ে অভিযুক্ত ১০ ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধানদের প্রত্যেককে ১ লাখ টাকা করে জরিমানা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তারা জরিমানা মওকুফের আবেদন করেছে।
এদিকে গত মাসে রেমিট্যান্স কমে ১৩৪ কোটি ডলারে ও রপ্তানি আয় ৪৩১ কোটি ডলারে নেমে গেলে বাজারে ডলার সংকট আরও প্রকট হয়। এ অবস্থায় ব্যাংকগুলো রেমিট্যান্স সংগ্রহে ডলারের দাম আরও বাড়িয়ে দেয়। তারা এখন ১১৪ থেকে ১১৬ টাকায় রেমিট্যান্সের ডলার কিনছে।
কোনো কোনো ব্যাংক বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো থেকে আরও বেশি দামে রেমিট্যান্স কিনছে। রেমিট্যান্স সংগ্রহকারী এক্সচেঞ্জ হাউজগুলো যেখানে ডলারের দাম বেশি পাচ্ছে ওই ব্যাংকেই রেমিট্যান্সের ডলার হস্তান্তর করছে। যে কারণে এখন সব ব্যাংকই বেশি দামে রেমিট্যান্স কিনছে। রেমিট্যান্স বেশি দামে কেনার কারণে ব্যাংকগুলোর ডলার কেনার খরচ বেড়ে যাচ্ছে।
ফলে আমদানিতেও বেশি দামে ডলার বিক্রি করছে। তবে গড় ক্রয় মূল্য ও গড় বিক্রয় মূল্যের মধ্যকার ব্যবধান সর্বোচ্চ ১ টাকা করা যাবে। এ বিষয়টি কেন্দ্রীয় ব্যাংক তদারকি করছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, তারা রেমিট্যান্সের ডলার কেনার ক্ষেত্রে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। তবে আমদানিতে নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি করা যাবে না।
এদিকে কয়েকটি ব্যাংক ডলারের দাম বাড়লেও তারা বাফেদা ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকে প্রতিবেদন দিচ্ছে আগের দামেই ডলার কেনার কথা বলে। এতে ডলারের দামে একদিকে বাফেদার দর কার্যকর হচ্ছে না। অন্যদিকে বাজারে ডলারের দামে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়েছে।
এর আগে আইএমএফের পরামর্শে বাফেদার মাধ্যমে ডলারের একক মূল্য কার্যকর করার পথে কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক দূর এগিয়েছিল। কিন্তু ডলার সংকটে এটি এখন আর প্রতিফলিত হচ্ছে না।
এদিকে আমদানিকারকরা জানান, ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি খরচ বাড়ছে। আগে আমদানির ডলার কেনা হতো ১১০ টাকা ৫০ পয়সা করে। ফিসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে প্রতি ডলারে পড়ত ১১১ টাকা।
এখন অনেক ব্যাংক আমদানিতে ডলারের দাম নিচ্ছে ১১৩ থেকে ১১৪ টাকা। কোনো কোনো ব্যাংক আরও বেশি নিচ্ছে। এতে আমদানি খরচ বেড়ে গিয়ে পণ্যের দাম আরও বেড়ে যাবে।
ব্যাংকাররা জানান, হুন্ডিতে রেমিট্যান্স আনলে ব্যাংকের চেয়ে ৮ থেকে ৯ টাকা বেশি পাওয়া যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো বেশি দামে রেমিট্যান্স কিনলে হুন্ডির প্রবণতা কমে যাবে। এখন হুন্ডির প্রতাপ কমাতে হলে ব্যাংকগুলোকে খোলাবাজারের ডলারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে। তা না হলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না।
এদিকে ঢাকা সফররত আইএমএফের মিশন ডলারের দাম কেন বাজারভিত্তিক করা হচ্ছে না এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ওপর প্রবল চাপ প্রয়োগ করেছে। তারা এ খাতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ থেকে বিরত থাকতে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছে। একই সঙ্গে ডলারের দাম পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে বলেছে।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মনে করে, ডলারের দাম পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দিলে বেশি মাত্রায় বেড়ে গিয়ে মূল্যস্ফীতির ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করবে। যা স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের জীবনযাত্রার মানকে কমিয়ে দেবে। সার্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাও ভারসাম্যহীন হয়ে পড়বে। এ কারণে তারা ডলারের দাম ধীরে ধীরে বাড়ানোর পক্ষে।
এদিকে খোলাবাজারে ডলার এখন ১১৮ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১১৯ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি হচ্ছে। কোনো এলাকায় এর চেয়ে বেশি দামে ডলার বিক্রি হচ্ছে।