জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের মুখোমুখি পুরো বিশ্ব। ২০২৩ সালটি উষ্ণতার সব রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে৷ কার্বন নির্গমনের রেকর্ডও গড়েছে বছরটি। ১৮৫০ থেকে তাপমাত্রার রেকর্ড রাখা হচ্ছে৷ এর আগে ২০১৬ সালকে “উষ্ণতম বছর” হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিসের সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সাল এখনো পর্যন্ত উষ্ণতম নথিভুক্ত বছর হিসেবে গণ্য করতে হবে৷ বছরের শুরু থেকেই উষ্ণতার রেকর্ড ভেঙে ফেলায় শেষ মাসের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। শেষ মাস অর্থাৎ ডিসেম্বর মাসের পরিস্থিতি “উষ্ণতার রেকর্ড”-এ তেমন কোনো প্রভাব ফেলবে না বলে মনে করা হচ্ছে। মার্কিন জলবায়ু এজেন্সিও ২০২৩ সালে আগের রেকর্ড ভাঙার পূর্বাভাস দিয়েছিল৷
দুবাইয়ে আন্তর্জাতিক জলবায়ু সম্মেলনে এই তথ্যটি আরও চাপে ফেলবে বিশ্ব নেতাদের। গতকাল মঙ্গলবার (৫ ডিসেম্বর) সম্মেলনে “গ্লোবাল কার্বন বাজেট”র বাৎসরিক রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে৷
তাতে দেখা যাচ্ছে, জীবাশ্ম জ্বালানির কারণে কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন বেড়েই চলেছে৷ নির্গমনের মাত্রা ২০২৩ সালে ৩,৬৮০ কোটি টন ছোঁবে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে৷ এমনটা হলে ২০২২ সালের রেকর্ডও ভাঙা হবে৷ সে ক্ষেত্রে ২০২৩ সালে আগের বছরের তুলনায় বৃদ্ধির মাত্রা দাঁড়াবে ১.১% এবং ২০১৯ সালের তুলনায় ১.৪%।
কোপার্নিকাসের প্রধান কার্লো বুয়নটেম্পো বলেন, “যতকাল গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন বেড়ে চলবে, ততকাল চলতি বছরের তুলনায় ভিন্ন ফল প্রত্যাশার কোনো অবকাশ নেই৷ তাপমাত্রা বেড়েই চলবে; সেইসঙ্গে তাপপ্রবাহ এবং খরাও বাড়বে৷ যত দ্রুত সম্ভব নির্গমনের মাত্রা শূন্যে আনাই জলবায়ুর ঝুঁকি সামলানোর কার্যকর উপায়৷”
দুবাইয়ে জাতিসংঘের ২৮তম জলবায়ু সম্মেলনে একের পর এক সতর্কবাণী শোনা যাচ্ছে৷ বুধবার গবেষকরা পুরো পৃথিবীজুড়ে বিপর্যয়ের শৃঙ্খলের অভূতপূর্ব ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছেন।
দৃশ্যমান নয়, পৃথিবীর এমন “ট্রাপওয়্যার” পর্যবেক্ষণ করেই তারা এমন সিদ্ধান্তে এসেছেন৷ সেই রিপোর্টে ২৬টি বিপজ্জনক প্রবণতার উল্লেখ করা হয়েছে৷ মানুষের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণায়নকেই এমন পরিস্থিতির জন্য দায়ী করা হয়েছে৷ এভাবে পৃথিবীর ইকোসিস্টেম প্রায় ভেঙে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷
কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতে, কয়েকটি বিপজ্জনক প্রবণতা আর মোকাবিলার কোনো সুযোগ নেই৷ একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে সবকটি সামলানো মানুষের পক্ষে কঠিন হবে।
রিপোর্টের অন্যতম প্রধান টিম লেন্টন সংবাদ সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, “মানবজাতি এর আগে কখনো এমন বড় মাত্রার হুমকির মুখে পড়েনি৷ তবে এখনো প্রায়শ্চিত্তের কিছু কিছু সুযোগ আছে। ইলেকট্রিক গাড়ি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্যের মতো প্রবণতা বিপদ কাটাতে সহায়তা করতে পারে৷”