এক কলেজছাত্রীর করা ধর্ষণ মামলায় টাঙ্গাইলের বাসাইলের সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মনজুর হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। একই মামলায় গত বছরও তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি হয়েছিল।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) জেলার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মাহমুদুল মোহসীন এ আদেশ দেন। ২০২২ সালে মামলাটি করেন ওই ছাত্রী। আদালত নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) মামলাটি তদন্ত করে।
মামলাটি এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। গত ১৭ জানুয়ারি মামলার সাক্ষ্যগ্রহণের নির্ধারিত তারিখে জনপ্রশাসন বিভাগের এ কর্মকর্তা আদালতে উপস্থিত ছিলেন না। মঙ্গলবার আদালত বাদীর জবানবন্দি নেন। এদিনও মনজুর অনুপস্থিত থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারি করেন।
২০২১ সালে বাসাইলে ইউএনও হিসেবে কর্মরত থাকার সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মির্জাপুরের ওই নারীর সঙ্গে পরিচয় মনজুর হোসেনের। একপর্যায়ে তারা প্রেমের সম্পর্কে জড়ান। বিয়ের কথা বলে মনজুর একাধিকবার ওই ছাত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হন। টাঙ্গাইল শহরে বাসা ভাড়া করে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে একত্রে কয়েক মাস বসবাসও করেন।
একই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর রাতে সরকারি (এসিল্যান্ডের ব্যবহৃত) গাড়িতে ইউএনওর পরিচিত জোবায়েত হোসেন, চালক বুলবুল হোসেন ও দুই আনসারসহ বেনাপোলে যান তারা। ওই রাতে তারা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে বেড়াতে যান। ১২ অক্টোবর তারা দেশে ফিরে আসেন।
কলেজছাত্রী বিয়ের জন্য চাপ দিলে মনজুর তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন।
বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে কলেজছাত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ করেন। একই সঙ্গে ২০২২ সালের ২২ মার্চ ইউএনও মনজুর হোসেনের কাছে একটি আইনি নোটিশ পাঠান। মনজুর ততদিনে বাসাইল থেকে বদলি হয়ে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় কর্মরত। এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মনজুরকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়।
ওই বছরের ২১ জুন আদালতে মামলা করেন মনজুরের সেই প্রেমিকা। মামলাটি তদন্ত করে ২৯ ডিসেম্বর পিবিআই আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্তে আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪৯৩ ধারার (বিবাহের বিশ্বাসে প্ররোচিত করে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে বসবাস) অপরাধ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত।
২০২৩ সালের ২৩ জানুয়ারি টাঙ্গাইল সদর উপজেলা আমলি আদালতের বিচারক অতিরিক্ত মুখ্য বিচারিক হাকিম মনিরা সুলতানা মনজুরের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। তখন উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন করেন ওএসডি মনজুর। আদালত তার ছয় সপ্তাহের জামিন মঞ্জুর করেন। ওই বছরেরই ৬ মার্চ নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করে ফের জামিন আবেদন করেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এই কর্মকর্তা। উচ্চ আদালতের জামিন আবেদনের মেয়াদ থাকায় আদালত ১৩ মার্চ ফের শুনানির দিন ঠিক করেন। ওইদিন টাঙ্গাইলের জেলা দায়রা ও জজ আদালতের বিচারক শেখ আব্দুল আহাদ শুনানি শেষে মনজুরের জামিন মঞ্জুর করেন।