বাংলাদেশের একজন মানুষ বছরে গড়ে ৮২ কেজি খাবার নষ্ট করেন। খাবার অপচয়ের এই হার যুক্তরাষ্ট্র, নেদারল্যান্ডস ও জাপানের মানুষের চেয়েও বেশি।
বুধবার (২৭ মার্চ) নাইরোবি-ভিত্তিক জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচি (ইউএনইপি) থেকে প্রকাশিত “ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স রিপোর্ট ২০২৪”-এ এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এ সমীক্ষায় ইউএনইপি’র সহযোগী হিসেবে ছিল ওয়ার্ল্ডওয়াইড রেসপন্সিবল অ্যাক্রেডিটেড প্রোডাকশন (ডাব্লিউআরএপি)। খুচরা এবং ভোক্তা স্তরে কী পরিমাণ খাদ্য বর্জ্য তৈরি হয় তার বিশ্বব্যাপী একটি ধারণা দিতেই সমীক্ষাটি পরিচালিত হয়।
ইউএনইপি’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি বছর ১৪.১০ মিলিয়ন টন খাবার নষ্ট হয়।
বাংলাদেশে খাবার অপচয়ের পরিমাণ আগের তুলনায় বেড়েছে। “ফুড ওয়েস্ট ইনডেক্স রিপোর্ট ২০২১” অনুসারে, বাংলাদেশিরা বছরে ৬৫ কেজি খাবার বাড়িতে নষ্ট করেছেন। যার ফলে দেশে মোট ১০.৬২ মিলিয়ন টন খাদ্য নষ্ট হয়েছে। তিন বছরের ব্যবধানে খাবার নষ্টের প্রবণতা বেড়েছে মাথাপিছু ১৭ কেজি।
ইউএনইপি’র প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশের একজন ব্যক্তি বাড়িতে বছরে যে পরিমাণ খাবার অপচয় করেন তা অনেক উন্নত দেশের চেয়েও বেশি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ মাথাপিছু খাবার অপচয় করেন ৭৩ কেজি। এছাড়া নেদারল্যান্ডসে ৫৯ কেজি ও জাপানে মাথাপিছু ৬০ কেজির মতো খাবার অপচয় হয়।
প্রতিবেদনে খাবার হিসেবে ধরা হয়েছে যেকোনো দ্রব্য যেটি প্রক্রিয়াজাত, আধা প্রক্রিয়াজাত বা কাঁচা অবস্থায় মানুষ খেতে পারে। এর মধ্যে পানীয় এবং অন্যান্য দ্রব্য যেগুলো খাদ্য তৈরি, প্রস্তুতি বা চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয় সেগুলোকেও খাদ্য হিসেবে দেখানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একজন ব্যক্তির দ্বারা বাড়িতে খাদ্য নষ্ট করার পরিমাণ চীনে ৭৬ কেজি, বেলজিয়ামে ৭১ কেজি, নিউজিল্যান্ডে ৬১ কেজি এবং রাশিয়ায় ৩৩ কেজি।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, সবগুলো মহাদেশ মিলিয়ে ২০২২ সালে মানুষের বাড়িতে দিনে ১ বিলিয়নেরও বেশি খাবার নষ্ট হয়েছে। পাশাপাশি ৭৮৩ মিলিয়ন মানুষ ক্ষুধার্ত ছিল। এছাড়া বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার মুখোমুখি হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে ১.০৫ বিলিয়ন টন খাদ্য নষ্ট হয়েছিল (অখাদ্য অংশ সহ) যার মাথাপিছু পরিমাণ দাঁড়ায় ১৩২ কেজি করে। এটি বিশ্বের ব্যবহারযোগ্য খাবারের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। নষ্ট হওয়া মোট খাদ্যের মধ্যে মানুষের বাসা-বাড়িতে নষ্ট হয়েছে ৬০%।
জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) নির্বাহী পরিচালক ইনগার অ্যান্ডারসেন বলেন, “খাবারের অপচয় একটি বৈশ্বিক সমস্যা। অথচ, লাখ লাখ মানুষ ক্ষুধার্ত থাকছে। খাদ্য উৎপাদন করতে গিয়ে প্রকৃতিরও যথেচ্ছ ব্যবহার হচ্ছে। এদিকে নজর দিলে সংকট কাটিয়ে ওঠা যাবে।”