‘পাঁচশো টাকায় এক সময় ব্যাগ ভরে বাজার এনেছি, সেই একই টাকায় আজ দুইটার বেশি বাজার করা সম্ভব হয় না।’, এমনটাই বলছিলেন জয়পুরহাট থেকে গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) পড়তে আসা শিক্ষার্থী নামিসুল আখবার খিয়াম। আক্ষেপের গল্প বলতে গিয়ে শুধুই দীর্ঘশ্বাস ফেলে খিয়াম আরো বলেন, ‘মূলত নুন আনতে পানতা ফুরায় অবস্থা। পছন্দের খাবার তো এখন বাহুল্য, নিত্যনৈমিত্তিক খাবার কিনতে গেলেও ভাবতে হচ্ছে পুরো মাস চলবো কীভাবে!’ শুধু খিয়াম নন এমন হাজারো শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছেন মেসে থেকে।
‘মাহে রমাদান’ বাঙালী মুসলমানের কাঙ্খিত রমজান মাস। পবিত্রতা-বিশুদ্ধতার মাস। ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা সারাটি বছর অপেক্ষায় থাকেন এই মাসের। বলা হয় রমজান আসেই আত্মশুদ্ধির জন্য, নিজেকে নতুন ভাবে গড়ার জন্য। সামগ্রিক পাপ থেকে নিজেকে মুক্ত করে পরলৌকিক সমৃদ্ধিতে আত্মনিমগ্ন হতেই যে মাসের আগমন, ঠিক সে মাসেই ভয়াবহভাবে বেড়েছে দ্রব্যমূল্য।
গত বছর থেকে দ্রব্যমূল্যের যে বেহাল উড্ডয়ন তার আগুনে যেন ঘি ঢালছে বাজার সিন্ডিকেট এবং অব্যবস্থাপনা। সরকারের অব্যবস্থাপনাকে দুষে আইন বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী সাজ্জাদ বাবর জানান, ‘ক্ষমতাসীনদের সার্বিক অব্যবস্থাপনার জন্যই আজ এই দশা। বাজার থেকে মাঠে সর্বস্তরে তাদের লেজুড় দলীয় সিন্ডিকেটের হস্তক্ষেপ। যার ভুক্তভোগী হচ্ছি আমরা। রমজানে ইফতারে পুষ্টিকর খাবার তো দূরের ব্যাপার, সাধারণ খাবারটাও এক ধরণের বিলাসিতার বস্তুতে গিয়েই ঠেকেছে।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে একেবারেই বেসামাল সামগ্রিক পরিস্থিতি। ঊর্ধ্বগতির করাল গ্রাসে জর্জরিত দেশের সর্বস্তরের জনতা। ভবিষ্যত গড়ার তাগিদে জন্মস্থান-পরিজন ছেড়ে দূরে এসে মেসে থেকে লেখাপড়া করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। অর্থনৈতিক মন্দার এই সময়ে সবচেয়ে বিপদগ্রস্থ যেন তারাই।
নিত্যদিনের পুষ্টিসহ খাবার চাহিদা মেটাতে যারপরনাই হিমশিম খাচ্ছে মেসে থাকা এইসব শিক্ষার্থীরা। স্বল্প আয়ের পরিবার থেকে গবিতে পড়তে আসে অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা। অনেকে নিজে থেকেই চেষ্টা করে উপার্জনের, তবে ঠিকভাবে তাল মিলিয়ে উঠতে পারছে না তারা।
এমনই একজন মাগুরার সন্তান রোহিত সাহা অরিন। লেখাপড়া করছেন প্রাণরসায়ন এবং অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগে তিনি বলেন, ‘এই দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতির বাজারে খাবারের তালিকা থেকে বাদ পড়ার পথে মুরগির মাংস। রুই কাতলা নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় তেলাপিয়া শেষ ভরসা। আর সাথে আছে ডিম। আলু ভর্তা আর ডাল খেয়েই কাটছে রাত।’
পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থাকে দায়ী করে বলেন, ‘বর্তমানে যেসব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে এসব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে যৌক্তিক কোনো কারণ নেই। মূলত নিয়মিত বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকায় খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা তাদের খেয়াল খুশিমতো দাম বাড়াচ্ছেন। আমদানিকারক ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের ইচ্ছায় মূল্য বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।’
লেখক: তাহমীদ হাসান
শিক্ষার্থী,গণ বিশ্বাবিদ্যালয়।